অগ্রসর রিপোর্ট : মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধে রাজনীতির সপক্ষে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র চার দিনব্যাপী একাদশ কংগ্রেসের উদ্বোধন হয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুর ২টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক দলের অতিথি নেতাদের উপস্থিতিতে এ কংগ্রেসের উদ্বোধন হয়।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জাতীয় পতাকা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ শ্রমিক, কৃষক, ছাত্রসহ সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্নি পেশার পার্টি কর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে লাল পতাকা মিছিলে ব্যাপক মানুষের গণজমায়েতের আয়োজন করে এ দলটি।
বিকেলে মুষল ধারায় বৃষ্টির কারণে সমাবেশস্থলে আগত নেতা-কর্মীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধে রাজনীতির সপক্ষে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে হলে গণবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিরোধী নীতি বদলাতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পার্টির উপদেষ্টা শ্রমিকনেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী, জসিমউদ্দিন ম-ল ও মঞ্জুরুল আহসান খান বক্তব্য রাখেন।
পার্টির কংগ্রেসে এবার ১২টি দেশ থেকে মোট ২৬ জন প্রতিনিধি কংগ্রেসে সংহতি জানাতে উপস্থিত হয়েছেন। এরমধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাম রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক রাজ্য সভার সদস্য ডি রাজা, সিপিআই (এম) পলিটব্যুরোর সদস্য নীলাৎপল বসু, সিপিআই (এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক কে এন. পিল্লাই রামচন্দ্র, শ্রীংলকার প্রেমদারা দিশানায়েকে, পাকিস্তানের পীর জাদা আহমেদ বক্স, ব্রিটেনের অধ্যাপক জন ফস্টার, জার্মানীর থমাস বেইসেনকেম্প, ভিয়েতনামের ন্যুয়েন টুয়ানফং, রাশিয়ার আলেকজান্ডার পোতাপভ, নেপালের সুরেন্দ্র প্রসাদ পান্ডের নেতৃত্বে ৮ জন সদস্য এতে অংশ গ্রহণ করেন।
সভাপতির বক্তব্যের পর ‘কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল’ গেয়ে উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে একটি লাল পতাকা মিছিল বের হয় এবং তা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
উদ্বোধনী সমাবেশে যোগ দিতে সকালে সদরঘাট এলাকায় বরিশাল, পটুয়াখালি, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও চাঁদপুরের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় নামেন।
চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে লাল পতাকা মিছিল নিয়ে ট্রেনে সকালে কমলাপুর আসে পার্টির নেতা-কর্মীরা। রেল-লঞ্চের পাশাপাশি বাসেও গাবতলী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান দিয়ে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকায় আসে।
সিপিবির দশম কংগ্রেস হয়েছিল ২০১২ সালের ১১-১৩ অক্টোবর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪ বছর পর এবারের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার সারাদেশের ৬৮৩ জন প্রতিনিধি কংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, যার মধ্যে ২১৭ জন নারী ও ১৭ জন আদিবাসী। এর বাইরে ১০৮ জনকে পর্যবেক্ষক মনোনীত করা হয়েছে। ৯৯ জন ভেটারেন সদস্যকে এই কংগ্রেসে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এদের নিয়ে ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে শুরু হবে রুদ্ধদ্বার সাংগঠনিক অধিবেশন। একইদিন বিকেল ৩টায় বিদেশি প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উদারনীতিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ২৯-৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭.৩০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মহানগর নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টি উত্তরাধিকারী সংগঠন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর কানপুরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে (কংগ্রেস) গঠিত হয়।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।