ষ্টাফ রিপোর্টার- মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাগেরহাটের রাজাকার নেতা শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড এবং খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ রায় দেন। এ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। রায়ে বলা হয়, আসামি সিরাজের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর আকরাম দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনটি অভিযোগের মধ্যে একটিতে। ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে, অথবা গুলি করে সিরাজ মাস্টারের দণ্ড কার্যকর করতে বলেছে ট্রাইব্যুনাল। আর আকরামকে স্বাভাবিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাটাতে হবে জেলখানায়।
এই দুজন ছাড়াও আবদুল লতিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ২৩ জুন রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। এরই মধ্যে গত ২৭ জুলাই দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুল লতিফ তালুকদার। এ কারণে মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে। পরে রায় ঘোষণার জন্য ১১ আগস্ট তারিখ ধার্য করে, ৫ আগস্ট আদেশ দেন একই ট্রাইব্যুনাল। মামলার রায় ঘোষণার সময় সিরাজুল ও আকরাম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ গঠনের আদেশ অনুসারে, মুক্তিযুদ্ধকালে সিরাজ মাস্টার নামে পরিচিত সিরাজুল হক ছিলেন তৎকালীন বাগেরহাট মহকুমা রাজাকার বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার। লতিফ ও আকরাম বাগেরহাট রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। খুলনার আনসার ক্যাম্পে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা অন্যান্য রাজাকার সদস্যদের সঙ্গে বাগেরহাটের সদর, কচুয়া, মোড়েলগঞ্জ ও রামপাল থানার বিভিন্ন গ্রামে যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ চালান, তার বিবরণ এ মামলার বিচারে উঠে এসেছে। মামলার মোট সাতটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম ছয়টিতে সিরাজের বিচার চলে। এর মধ্যে ১ থেকে ৫ নম্বর অভিযোগে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধের দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দিয়েছে আদালত। আর আকরামের অপরাধের বিচার হয়েছে ৫ , ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে। এর মধ্যে প্রথম দুটি ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছে আদালত। ৭ নম্বর অভিযোগে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে দেয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ জুন তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-১ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই রাতেই লতিফকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২০ জুন আকরামকে রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করা হয়। আত্মগোপনে থাকা সিরাজুলকে গত বছর ২১ জুলাই বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছর ২৫ আগস্ট, প্রসিকিউশনের তদন্ত দল এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়। এরপর গত বছর ৫ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সিরাজ, আকরাম, লতিফের যুদ্ধাপরাধের বিচার। দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।