অগ্রসর ডেক্সঃ সাবাশ বাংলাদেশ । সাবাশ টিম বাংলাদেশ। ঈদ এর আগেই ঈদ’র জোয়ার বইছে বাংলাদেশে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিশ্ববাসীকে অভাবনীয় দৃষ্টি নন্দন ক্রিকেট নৈপন্য প্রদর্শন করে সাউথ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
দারুণ জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে রবিবার বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়েছে। টুর্নামেন্টে এটি বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ছিল দ্বিতীয় ম্যাচ। এর আগে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে তারা ১০৪ রানে হেরেছে।
বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়। এর আগে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের ৬৭ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা। সবমিলিয়ে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ জয়। আর সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে এটি বাংলাদেশের ১২তম জয়।
এদিন লন্ডনের কেনিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে বাংলাদেশের দেয়া ৩৩১ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৯ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ রান এইডেন মার্করাম ও জেপি ডুমিনির। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ৩টি, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিস ২টি, সাকিব আল হাসান ১টি ও মেহেদী হাসান মিরাজ ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম উইকেট পড়ে ইনিংসের দশম ওভারে। মিরাজের বলে মুশফিকের থ্রোতে রান আউট হন তিনি। ৩২ বলে ২৩ রান করেন এই প্রোটিয়া ওপেনার। এরপর ৫৩ রানের জুটি গড়েন এইডেন মার্করাম ও ফাফ ডু প্লেসিস। ইনিংসের ২০তম ওভারে সাকিবের ঘূর্ণিতে ক্লিন বোল্ড হন অপর ওপেনার মার্করাম।
এরপর ঝড়ো ব্যাটিং করতে থাকা ফাফ ডু প্লেসিসকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ১৪৭ রানে বোল্ড হন তিনি। ফেরার আগে ৫৩ বলে ৬২ রান করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। ডু প্লেসিস আউট হওয়ার পর ৫৫ রানের জুটি গড়েন মিলার ও ডুসেন।
৩৪তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে থার্ডম্যানে মিলারের ক্যাচ মিস করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে, ৩৬তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ তুলে দেন মিলার। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা মিরাজ সুনিপুণভাবে ক্যাচটি ধরে ফেলেন।
মিলার ফিরলেও জেপি ডুমিনি ও ডুসেন মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রেক থ্রুর প্রয়োজন ছিল। ৪০তম ওভারে কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু এনে দেন সাইফউদ্দিন। ওভারের প্রথম বলে ভ্যান ডের ডুসেনকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তিনি। ৩৮ বলে ৪১ রান করেন ডুসেন। ৪৩তম ওভারে আবার উইকেট শিকার করেন সাইফউদ্দিন। তার দেয়া ফুল টস ডেলিভারিটি উড়িয়ে মেরেছিলেন আন্দিল ফেলুকায়ো। কাভারে দাঁড়িয়ে থাকা সাকিব আল হাসান ঝাপিয়ে পড়েন ক্যাচটি নিয়ে নেন।
ফেলুকায়ো আউট হওয়ার পরই মূলত জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে বাংলাদেশ। ৪৬তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানার কাছে ক্যাচ হন ক্রিস মরিস। অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানরা আউট হলেও এক প্রান্তে গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন জেপি ডুমিনি। ৪৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে ওভারের প্রথম বলে ডুমিনিকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজ। ইনিংস শেষে কাগিসো রাবাদা ২ রান করে ও ইমরান তাহির ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের এটি সেরা ইনিংস। এর আগে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২২৯। ২০১৫ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে এই রান করেছিল টাইগাররা।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ রান করেন সাকিব আল হাসান। ৩০ বলে ৪২ রান করেন সৌম্য সরকার। ৩৩ বলে ৪৬ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০ বলে ২৬ রান করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে আন্দিল ফেলুকায়ো ২টি, ক্রিস মরিস ২টি ও ইমরান তাহির ২টি করে উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ২১ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ইনিংস: ৩৩০/৬ (৫০ ওভার)
(তামিম ইকবাল ১৬, সৌম্য সরকার ৪২, সাকিব আল হাসান ৭৫, মুশফিকুর রহিম ৭৮, মোহাম্মদ মিথুন ২১, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪৬*, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ২৬, মেহেদী হাসান মিরাজ ৫*; লুঙ্গি এনগিদি ০/৩৪, কাগিসো রাবাদা ০/৫৭, আন্দিল ফেলুকায়ো ২/৫২, ক্রিস মরিস ২/৭৩, এইডেন মার্করাম ০/৩৮, ইমরান তাহির ২/৫৭, জেপি ডুমিনি ০/১০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস: ৩০৯/৮ (৫০ ওভার)
(কুইন্টন ডি কক ২৩, এইডেন মার্করাম ৪৫, ফাফ ডু প্লেসিস ৬২, ডেভিড মিলার ৩৮, ভ্যান ডের ডুসেন ৪১, জেপি ডুমিনি ৪৫, আন্দিল ফেলুকায়ো ৮, ক্রিস মরিস ১০, কাগিসো রাবাদা ২*, ইমরান তাহির ৫*; মোস্তাফিজুর রহমান ৩/৫৬, মেহেদী হাসান মিরাজ ১/৪৪, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২/৫২, সাকিব আল হাসান ১/৫০, মাশরাফি বিন মর্তুজা ০/৪৯, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ০/৩৮)।
ম্যাচ সেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।