স্টাফ রিপোর্টার: ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং এদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের স্বাধীনতা পেয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই আজকে দেশের উন্নতি হচ্ছে। কাজেই নৌকা মার্কা কখনো ভুলবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এইটুকু ভরসা আমাদের ওপর রাখবেন। নৌকাই দেবে শান্তি, নৌকাই দেবে উন্নতি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাবেক সিটি মেয়র বদরউদ্দিন আহমেদ কামরানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন দলের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, দলের সাংগঠনিক স¤পাদক মিজবাহউদ্দিন সিরাজ, সাবেক চীফ হুইপ আব্দুস শহীদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। জাতির পিতা এটা আগেই বলে গেছেন। আজ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন ছিল বিশ্বমন্দা। তা কাটিয়ে আমরা দেশ পরিচালনা করি। দেশে ধারাবাহিক উন্নয়ন হয়েছে আমাদের আমলে। কিন্তু বিএনপির শাসনামলে দেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ বিরাজ করে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ আমল হচ্ছে শান্তি-উন্নয়নের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে কোথায় গন্ডগোল হয়নি? সর্বত্র তারা সস্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। তাদের সন্ত্রাস থেকে সিলেটও বাদ যায়নি উল্লেখ করে তিনি সে সময়ের সন্ত্রাসের কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র আমলে হযরত শাহজালাল (রহ:)-এর মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর এবং সিনেমা হলে বোমা হামলা, মেয়র বদরউদ্দিন কামরানের সভায় গ্রেনেড হামলাসহ সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলাসহ একটার পর একটা বোমা, গ্রেনেড সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি আমল ছিল সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, বাংলা ভাইয়ের আমল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বোমা হামলা চালায়। একই কায়দায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বানচালের নামে তারা মানুষ হত্যা করে। তারা যেভাবে মানুষ হত্যা করেছিল, তা পৃথিবীর ইতিহাসে আর আছে কিনা জানি না।’
তিনি বলেন, ‘যারা পেট্রোল বোমা ছুড়ে ও আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, তাদের কোন ক্ষমা নাই। যেখানে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে সেখানেই মামলা হয়েছে এবং প্রত্যেকের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে, আমরা বিচার করবো।’
তিনি বলেন, তারা মায়ের সামনে মেয়ে, বাবার সামনে ছেলেকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে একের পর এক। খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসা থেকে তখন কেউ রেহাই পায়নি।
বিএনপি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই শান্তি, ওরা চায় অশান্তি। আওয়ামী লীগ চায় ন্যায় প্রতিষ্ঠা হোক, ওরা চায় লুটপাট।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা উড়ে এসে ক্ষমতায় বসে তারা জঙ্গিবাদ করে। তাদের সময়ে দেশ এগিয়ে যায় না, কোনো উন্নয়ন হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের সময় পাঁচ কোটি মানুষ নিন্মবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তে উঠে এসেছে। এই জাতি নিন্মবিত্ত থাকতে পারে না। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি। এই দেশ উন্নত হবে, সমৃদ্ধ হবে। আওয়ামী লীগ বাংলার জনগণের সংগঠন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হবেই।
সমাবেশস্থলে জনতার ঢল নামে। জনতার ভিড়ে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসার মাঠ ছাড়িয়ে আশাপাশের সকল রাস্তা ভরে যায়। দুপুর থেকেই লোকজন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে সমাবেশস্থলে জড়ো হন। বিপুল করতালি ও উল্লাসের মধ্যে বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে পৌঁছেন। জনতার শ্লোগানে তখন সমাবেশস্থল মুখরিত হয়ে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। আওয়ামী লীগই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের লক্ষ্য সব বিভাগেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। শিগগিরই সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, সিলেটে আজ ২২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। আমরা সিলেট বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছি। এর কাজ আমরা ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর শুরু করেছিলাম, কিন্তু বিএনপি এসে সে কাজ বন্ধ করে দেয়। রিফুয়েলিং বন্ধ করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান এখন লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটে আসে। ঢাকা-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে। বিমানে উন্নয়ন এসেছে। আরো ৬টি নতুন বোয়িং বিমান বহরে যুক্ত করা হয়েছে। সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন করে সরাসরি রিফুয়েলিংয়ের উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ করবো, তা করেছি। থ্রি-জি চালু করেছি, দ্রুতই ফোর-জি চালু করা হবে।
তিনি বলেন, দেশে শিক্ষার সম্প্রসারণ হচ্ছে। বিজ্ঞান ও ক¤িপউটার শিক্ষা এর মধ্যে অন্যতম। দেড় কোটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ জনকে বিদেশে চাকরি দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে আজ এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। কেউ বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে না। সারা বাংলাদেশে ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, যেন কেউ বসে না থাকে। আমরা বেতন বাড়িয়ে দিয়েছি। কোনো সরকার ১২৩ শতাংশ বেতন বাড়াতে পারেনি, আমরা করেছি।
শিক্ষা খাতের উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা সহায়তা ট্রাষ্টের মাধ্যমে এক কোটি ২৮ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি এবং উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে। এবারও জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ শিশুদের হাতে হাতে বই পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ যখন উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়, মানুষ যখন সুখে-শান্তিতে থাকে মানুষের জীবনে যখন শান্তি ফিরে আসে, আমরা দেখি তখন একজনের মনে খুব অশান্তি দেখা দেয়।’
বাংলাদেশের মাটিতে কোনও জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের স্থান হবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই আপনারা সজাগ থাকবেন। আপানাদেরকেও লক্ষ্য রাখতে হবে কেউ যেন জঙ্গীবাদীর কাছে না যেতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ চায় এদেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হোক।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যেকর হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিচার অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হবে। মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা শিখতে হবে। পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছেন, সে অনুযায়ী স্বাধীনতার সুফল মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়াই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী জনসভা মঞ্চের পাশে সিলেটের ২২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডকে সরকারের পক্ষ থেকে উপহার বলেও উল্লেখ করেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।