অগ্রসর রিপোর্ট : ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার যে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ তার প্রতি বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে সফররত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে একথা বলেন।
বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফিলিস্তিনী প্রতিনিধি দলের পক্ষে মাহমুদ আব্বাস নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকের পরে সাংবাদিদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব মো শহীদুল হক। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বায় সমর্থন করে বলেও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেছেন।
ফিনিস্তিনে সংকটময় পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ইস্যু সমাধানে দীর্ঘদিন চলমান ‘দুই জাতির জন্য দুই রাষ্ট্র’ নীতিটিও বর্তমানে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
শহীদুল হক বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে, ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনী জনগণের জন্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তাঁর অকুন্ঠ সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেও জানায়, বলেন পররাষ্ট্র সচিব।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালের মানচিত্র অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দিয়ে আসছে। ঢাকা বরাবরই বলে আসছে, কোন স্বার্থের ভিত্তিতে নয়, সংবিধানে বলা আদর্শের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি মুক্তির সংগ্রামে বাংলাদেশের এই সমর্থন অব্যাহত থাকবে, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এই সফর ফিলিস্তিনের প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর প্রথম কোন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফর।
বাংলাদেশে মাহমুদ আব্বাসের এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কেও নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।
শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ফিলিস্তিনের অকুন্ঠ সমর্থন বিশেষ করে চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতের কথা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন।
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনি আন্দোলন বাংলাদেশকে অনুপ্রাণিত করেছিল,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এবং ইয়াসির আরাফাতের মধ্যকার গভীর বন্ধুত্ব থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘তিনি সমগ্র বিশ্বেরই একজন মহান নেতা ছিলেন।’
ফিলিস্তিনের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন অব্যাহত রাখায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাহমুদ আব্বাস বলেন,‘ অন্যান্য অনেক দেশের মতই বাংলাদেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং আমরা চাই বাংলাদেশ তাঁর এই নীতিতে অটুট থাকুক।’
পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন, মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘ফিলিস্তিন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ দেয়নি, এজন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ।’
মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিন শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ইসরায়েলের সঙ্গে সমস্যার সমাধার চায়। আর এখনকার প্রেক্ষাপট অনেক ভিন্ন হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে উল্লেখ করে মাহমুদ আব্বাস বলেন, কাজেই আমরা চাই বাংলাদেশেও এক্ষেত্রে তাঁর সমর্থন অব্যাহত রাখুক।
আলোচনা পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মাহমুদ আব্বাসের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে একটি ‘আন্তঃসরকার যৌথ কমিটি’ বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি নিজ নিজ দেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দুই দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যে নিয়মিত পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে এবং ‘আন্তঃসরকার যৌথ কমিটি’র প্রথম বৈঠক এ বছরের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, বলেন পররাষ্ট্র সচিব।
দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে শিগগিরই একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে প্রেরণের প্রস্তাব দিয়েছে।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলটি শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসছে বলেও পররাষ্ট্র সচিব জানান।
ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের বহুদিন ধরে বাংলাদেশে বৃত্তি দেয়ায় বৈঠকে মাহমুদ আব্বাস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, মেডিকেল এবং অ্যাকাউন্টিংসহ বিভিন্ন সাধারণ বিষয়ে এবং মিলিটারি শিক্ষার জন্যও ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থীরা এখন বাংলাদেশে আসছে।
মাহমুদ আব্বাস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাখা পরিদর্শক বইয়েও স্বাক্ষর করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মধ্যে একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেলে মাহমুদ আব্বাস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার জন্য এলে তাঁকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানানো হয়।
বিকেল ৩টা ২৩ মিনিটে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসলে কার্যালয়ের টাইগার গেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে ফুলের তোড়া উপহার দেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।