অগ্রসর রিপোর্ট : প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক।
তারা বলেন, অতীতের মতোই এবারো বাজেট বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে বিএনপি-জামায়াত জোট ষড়যন্ত্র করছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এ বাজেট বর্তমান সরকারের গত ৭টি বাজেটের মতো সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা আজও প্রস্তাবিত বজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন। তারা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবও পুনর্বিবেচনা করার আহবান জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার সকাল ১১টা ০৪ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়।
গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ষষ্ঠ দিনে আজ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের শফিকুল ইসলাম শিমুল, বিএম মোজাম্মেল হক, তানভীর ইমাম, মাহমুদ উস সামাদ, হাবিবে মিল্লাত, তালুকদার মো. ইউনুস, মোঃ মিজানুর রহমান, স্বপন ভট্টাচার্য্য, এডভোকেট নাভানা আক্তার, মো. রেজাউল হক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন, ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান ও জাসদের শিরীন আখতার অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি রপ্তানী ৫ বিলিয়ন ডলার ও আইটি পেশাজীবিদের সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করা এবং জিডিপিতে আইসিটি খাতের অবদান ৫ শতাংশ নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন পূরণের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। এ স্বপ্ন পূরণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ নানামুখী উদ্যোগ, প্রকল্প, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাজ করে চলেছে। এ লক্ষ্য পূরণে বিভিন্ন উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরেও এ বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার শত ভাগের উর্ধ্বে অর্থাৎ ১২১ শতাংশ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করেছে। এর মধ্য ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব’ অন্যতম। তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্ভাবন, সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোক্তাদের সিড ফান্ড ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদান এবং গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন নতুন পণ্য ও সেবা সৃষ্টির জন্য ইনোভেশন ডিজাইন অনট্রাপ্রেনিউরশিপ একাডেমি (আইডিয়া) প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে একুশ শতকের উপযোগী দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে দেশে আইটি পেশাজীবীর সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করা। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের অধীনে ৫ হাজার ১২০ জনের ২শ’ ঘন্টাব্যাপী (৫০দিন) প্রফেশনাল আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। এর আগে এ প্রকল্পের আওতায় ২০ হাজার নারী ও ১ হাজার ৯২০জন মিডিয়া কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মোট ৫৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৩০৫ জন নারীসহ ৬ হাজার ৪১ জনকে স্কিল এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম, সি-লেভেল, ওরাকল অ্যান্ড এসএপিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এমপ্লয়মেন্ট স্কীমের আওতায় ১ হাজার ২৮৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিগত এক বছরে বিসিসি’র ইনস্টিটিউট বিকেআইআইসিটি ও ৬টি বিভাগীয় সদর কেন্দ্রের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে কাস্টমাইজড কোর্সে ৩ হাজার ৬১৭ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের সক্ষমতা উন্নয়নে ২০ জনকে প্রশিক্ষণ এবং চাকরি মেলা-২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ আয়োজনের মাধ্যমে ২০০ জনের বেশি প্রতিবন্ধীর চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায় ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ প্রোগ্রামের আওতায় মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল ২০১৫ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ ল্যাপটপ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ পর্যন্ত সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে।
জাসদের শিরীন আখতার প্রস্তাবিত বাজেটে করকাঠামোয় কার্যকর সংস্কার করার আহবান জানান। তিনি ভ্যাটের মতো পরোক্ষ করের মাধ্যমে সাধারণ গরীব ভোক্তাদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে প্রত্যক্ষ করারোপের সুপারিশ করেন।
জাতীয় পার্টির সদস্য নূরুল ইসলাম মিলন বলেন, এবারের বাজেটের প্রতিপাদ্য ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ’ দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠার ক্ষেত্রে বিরোধী দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রাজস্ব আদায়ে সন্দেহ রয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, বিগত অর্থবছরে কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় হয়নি। এবার রাজস্ব আদায়ের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন যোগ্য নয়।
তিনি বলেন, অতীতে বিরোধী দলের ভূমিকা ছিল লজ্জাকর ও হাস্যকর। আমরা সংসদে ও সংসদের বাইরে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছি।