প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’দেশের জনগণের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের সবখাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘সকল সংকীর্ণতা ভুলে উদার মানসিকতা নিয়ে দু’দেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও পারস্পরিক উন্নয়নে প্রত্যেককে কাজ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা আজ তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (এসইবিআই) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভাষণকালে একথা বলেন।
তিনি বলেন, এ অঞ্চল থেকে দারিদ্র্য নির্মূল ও জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাই আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য। এক্ষেত্রে উভয় দেশের যৌথ প্রয়াস কাক্সিক্ষত সাফল্য আনতে পারে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এসইবিআই’র চেয়ারম্যান উপেন্দ্র কুমার সিনহা, বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেইন অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ড. মশিউর রহমান, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পুঁজিবাজারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে পুঁজি সংগ্রহে শক্তিশালী, কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক পুঁজিবাজারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের বিপুল পুঁজি প্রয়োজন একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ ব্যাপারে সব সময় সঠিক ও দূরদর্শী পদক্ষেপ নেবে।
শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেশ ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শেয়ার বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্কতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার বিএসইসিকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
দুই দেশের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্যে বিএসইসি ও এসইবিআই’র মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের শেয়ার মার্কেট উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এমওইউ একটি মাইলস্টোন হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশের জনগণের অর্থনৈতিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে এই এমওইউ অর্থনৈতিক বিকাশে বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সত্যিকার বন্ধু এবং নিকট প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন ধাপে ধাপে উন্নত হচ্ছে। দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিদ্যমান সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছরে দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে।
দুই দেশ সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, স্বল্প সময়ের মধ্যেই দুই দেশ অভিন্ন নদীসমূহের পানি প্রবাহ বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, নৌপথে যোগাযোগ, সড়ক ও রেলরুট এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা সম্প্রসারণে দুই দেশ অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদারে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে অন্যতম প্রধান উৎসব ক্যাপিটাল মার্কেট।
শেয়ার বাজার সংস্কারে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক, দক্ষ, টেকসই ও শক্তিশালী ক্যাপিটাল মার্কেট গড়ে তুলতে অব্যাহত চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, এসব সংস্কার উদ্যোগ বিএসইসি-কে ক্যাটাগরি বি থেকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নয়নে সহায়ক হবে।
আরো উন্নয়নের জন্য বিএসইসি’র ভবিষ্যত কর্মসূচি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটালাইজড ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় বাড়তি নতুন পণ্য অন্তর্ভুক্ত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিনিয়োগকারীদের বিশেষ করে তরুনদের শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে আর্থিক বিষয়ে শিক্ষা ছাড়াও সক্ষমতা সৃষ্টিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিএসইসি ও এসইবিআই চেয়ারম্যানদ্বয় এমওইউ-তে স্বাক্ষর করেন।
পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, সম্পর্ক বলিষ্ঠ করতে দু’দেশকে উদার মানসিকতা নিয়ে সংকীর্ণতা পরিহার করে এগিয়ে আসতে হবে।