সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের হাওরের পানিতে প্রাথমিক ভাবে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন হাওরে মাছ মরে ভেসে উঠার ঘটনায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনরে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার সকাল থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তনদী জাদুকাঁটা, সদরের দেখার হাওর, বিশ^ম্ভরপুরের খড়চার হাওর সহ বিভিন্নি হাওর পরিদর্শন করে প্রাথমিক ভাবে পানি, উদ্ভিদ, মাঠি, মড়ে ভেসে উঠা মাছ, মড়া হাঁস ও বিভিন্ন কীঠপতঙ্গ পরীক্ষা করে এই তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছন।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ফিজিক্যাল সাইন্স এটোনিমিকেল কমিশনের সদস্য ড.দিলীপ কুমার সাহা রবিবার গণমাধ্যকে বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে হাওরের পানিতে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার কোন সিমটম নাই। তবে তিনি আরো জানান, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর থেকে বিভিন্ন প্রকার পানি, মরা মাছ ও মরা হাঁসের নমুনা সংগ্রহ করে তাদের আরো একটি দল রবিবার সকালেই ঢাকায় নিয়ে গেছেন। সেখানে ল্যাব টেস্টের পর নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে এই পানিতে আসলেই কোন ইউরেনিয়াম আছে কি না ?
হাওরে মাছ মরে যাওয়ার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাওরের ধান পচে ও ধানে সার প্রয়োগ করার ফলে রাসয়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলে এই মাছ মারা যেতে পারে। তারপরও তারা সারা দিন জেলার তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর সহ আরো বেশ কয়েকটি আক্রান্ত্র হাওর ও নদীতে গিয়ে কাজ করছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
পরমাণু প্রতিনিধি দলের সাথে আরো আছেন বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের প্রধান সাইন্টিফিক অফিসার ড. দেবাশিষ পাল ও বাংলাদেশ ক্যামিস্ট্রি ডিভিশনের হেড ড. বিলকিস আরা বেগম।
শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের এই প্রতিনিধি দলটি সুনামগঞ্জে পৌছান। রবিবার সকাল ৮টায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তনদী জাদুকাঁটা ও সদরের দেখার হাওরের পানি পরীক্ষা করে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন কমিশনের মূখ্য গবেষক দিলীপ কুমার সাহা। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি দল দিনভর খরচার হাওর ও জাদুকাটা নদীর পানি পরীক্ষা করেও পানিতে ইউরেনিয়ামের কোন প্রকার উপস্থিতি পাননি বলেও নিশ্চিত করেন। তারা সারাদিন জেলার বিভিন্ন হাওরে এধরনের পরীক্ষা চালাবেন এবং নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের প্রধান সাইন্টিফিক ল্যাবে নিয়ে আরও নিবিরভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করবেন।
এর আগে শনিবার আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর হাওরের পানিতে মাছ, হাঁস ও কীটপতঙ্গ মরে ভেসে ওঠতে শুরু করে। এর আগে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়েল উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগও হাওরের পানি পরীক্ষা করে ইউরেনিয়াম উপস্থিতির বিষয়টিকে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচারের ফলে জনমনে আতংক ছড়ানো ও প্রপাগান্ডা হিসেবে উল্লেখ করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধাানী ঢাকার এক এনজিওর প্রতিনিধি বিগত কয়েক বছর ধরে সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একাধিকবার যাতায়াত করে নিজেকে হাওর ও নদী বিশেষজ্ঞ মহাগবেষক হিসাবে নিজেকে জাহির করতে গিয়ে সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের লোকজনের মনে আতংক ছড়াতে এবং উস্কানি দিতে কিছু গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যবহার করে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলার অপচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের বোরো ফসলী হাওর ডুবির পরও ওই এনজিওর প্রতিনিধি বেশ কয়েকবার সুনামগঞ্জ হাওর এলাকায় অনেকটা নীরবে আসা যাওয়া করেছেন বলেও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য পানি দূষন ও মরে মাছ, হাস, কীট পতঙ্গ ভেসে উঠায় মাত্রাতিরিক্ত দুগর্ন্ধের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে সরকারের আরও একাধিক এক্সপার্ট টিম। জেলার বিভিন্ন হাওরের ধান পঁচে পানিতে হাইড্রোজেন সালফাইট ও এ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হওয়ার কারণে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ার মাছ ও হাস মরতে শুরু করে। সেই সাথে ধানে ব্যবহৃত কীটনাশনক ও রাসায়নিক সার যোগ হয়ে হাওরের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।
হাওরের মানুষের সাথে আলাপ করে জানা গেছে গত তিনদিন বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বাতাসে এ্যামেনিয়া গ্যাসের আধিক্য কমেছে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষতিকারক এ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমান কমাতে এবং পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে বিভিন্ন হাওরে চুন ও জিওলাইট দেয়ার।