ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৪ সালের আগস্টে সর্বশেষ হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। মুশফিকের নেতৃত্বে ক্যারবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩-০ ব্যবধানে। এরপর মাশরাফির নেতৃত্বে ৭টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ, যার ৬টিতেই জয়ী লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হারলেও (২-১) হোয়াইটওয়াশ চোখ রাঙ্গাতে পারেনি। তবে এবার নিউজিল্যান্ড সফরে এসে নিজের অধিনায়কত্বে প্রথম আর দীর্ঘ ২৮ মাস পর হোয়াইটওয়াশ হলো মাশরাফি নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে শুরুতেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্রামে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম ওভারে টম লাথামকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজ। দ্বিতীয় ওভারেই মোস্তাফিজ বাংলাদেশকে দিতে পারতেন দ্বিতীয় সাফল্য। কিন্তু স্লিপে ইমরুল ক্যাচ মিস করে ম্যাচটিই মিস করে বসলেন! নেইল ব্রুম শূণ্য রানে জীবন পাওয়ার পর আর পিছনে ফিরে তাকাননি। বোলারদের কড়া শাসন করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। চোখের পলকে সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে যান তিনি। কিন্তু সেই মোস্তাফিজই তার লাগাম টেনে ধরেন। ৯৭ রানে মোস্তাফিজ আউট করেন ব্রুমকে। গালিতে ব্রুমের অসাধারণ ক্যাচ ধরেন মাশরাফি। দ্বিতীয় উইকেটে ব্রুমকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দু’জন ৩১.৩ ওভারে ১৭৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে আনেন।
ব্রুম আউট হওয়ার পর জেমস নিশামকে নিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসন ৯৫ ও জেমস নিশাম ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে বড় সংগ্রহের আশা জাগিয়েও সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের সামনে লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারেনি বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান তুলেছে সফরকারীরা।
আজ শনিবার শেষ ওয়ানডেতে টসে জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। ওপেনিং জুটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ দাঁড়ায়। তামিম ও ইমরুল মিলে প্রথম উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১০২ রান জমা করেন।
মিচেল স্যান্টনারের বলে ইমরুল ফিরে গেলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের ছন্দপতন ঘটে। ৬২ বলে ৫ চার ও এক ছয়ে ৪৪ রান করা ইমরুল কিউই বাঁ-হাতি এই স্পিনারের বলে ওয়াইড লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে নাইল ব্রুমের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
ইমরুলের বিদায়ে ক্রিজে নামেন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। কিন্তু তিনিও অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে যান ম্যাট হেনরির বলে। যাওয়ার আগে ১৪ বলে ৪ চারে ১৯ রান করেন।
সাব্বিরের বিদায়ে কোণঠাসা বাংলাদেশের জন্য নতুন শুরুর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু গত দুই ম্যাচ ধরে ব্যর্থ হওয়া মাহমুদউল্লাহ (৩) দলকে মহাসমুদ্রে ফেলে আউট হলে গেলেন। টিম সাউটির অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল টেনে পুল করতে গিয়ে জেমস নিশামের সহজ ক্যাচে বিদায় নেন। আউট হওয়ার পর নিজে যেভাবে হতাশ হলে, ততক্ষণে সেই হতাশা ছড়িয়ে গেছে সমগ্র টাইগারস ভক্তদের হৃদয়ে।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর আর ৮ রান যোগ করে ফিরে যান ওপেনার তামিম ইকবালও। ৮৮ বল খেলেও থিতু হতে পারলেন না তামিম! ৮৮ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৯ রানের ইনিংস খেলে আউট হন এই ওপেনার। তার আউটের ধরন ছিল দৃষ্টিকটু। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ব্রুমের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেয়ার আগে ক্যারিয়ারের ৩৪তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
তামিম আউট হওয়ার পর শেষ ভরসা হিসেবে সাকিব-মোসাদ্দেকই ছিলেন। দু’জন মিলে ২৭ রানের জুটিও গড়েছিলেন। এবার ভাগ্যদেবী সহায় হয়নি বাংলাদেশের। বাজে একটি রান নিতে গিয়ে কাটা পড়লেন সাকিব ব্যক্তিগত ১৮ রানে। সঙ্গী হারিয়ে ফিরে যান তরুণ ক্রিকেটার মোসাদ্দেকও। ১৩ বলে ১১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
এ দিন নুরুল হাসান দায়িত্বশীল ব্যাটিং না করলে বাংলাদেশের স্কোরটা ২০০-এর নিচেই থাকত। ম্যাচে ৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংসে খেলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ৩৯ বলে ৩ চার ও এক ছয়ে তিনি তার ৪৪ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। এটাই তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। অভিষেক ম্যাচে ২৪ রান করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের স্কোর ২৩৫ হওয়াতে মাশরাফির অবদান ১৪।
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্যান্টনার ও ম্যাট হেনরি। এ ছাড়া সাউদি, জিতেন প্যাটেল, নিশাম ও উইলিয়ামসন প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়েছেন।