অগ্রসর রিপোর্ট : আগামীকাল বৃহস্পতিবার ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মিশন শুরু করতে যাচ্ছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। চার বছর আগে থেকে বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া ইংলিশরা এখন মাঠের লড়াইয়ে সবকিছু প্রমানের অপেক্ষায় মুখিয়ে আছে।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে চার বছর আগে যৌথভাবে আয়োজিত সর্বশেষ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় ছিল ইংল্যান্ডের কাছে দারুন অস্বস্তির। তখন থেকেই মূলত সাদা বলে নিজেদের কিভাবে প্রমান করা যায় তা নিয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু করে ক্রিকেটের প্রবর্তকরা।
শুধুমাত্র চিন্তাধারার মধ্যেই যে ইংলিশদের পরিকল্পনা থেমে থাকেনি তা গত চার বছরে ঠিকই প্রমান করেছে ইয়োইন মরগানের দল। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল হিসেবেই তারা বিশ্বকাপ শুরু করতে যাচ্ছে। এই সময়ে মধ্যে দুইবার ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরটিও এসেছে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের হাত ধরে। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নটিংহ্যামে ৬ উইকেটে করা ইংল্যান্ডের ৪৮১ রানের ইনিংসটিই এখন ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।
ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের এই পুনরুত্থানের মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছে ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতা। জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, মরগান ও জস বাটলারকে নিয়ে সাজানো ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার এই মুহূর্তে বিশ্বের যেকোন বোলারের জন্য ত্রাস। ইংল্যান্ডের লেগ-স্পিনার আদিল রশিদ বলেছেন, ‘বেশ কয়েকজন বিশ্ব মানের খেলোয়াড় নিয়ে গড়া বর্তমান এই ইংল্যান্ড দলটির একজন সদস্য হতে পেরে আমি দারুন গর্বিত। প্রতিপক্ষ ৩৭০ রান করার পরেও ড্রেসিং রুমে আমরা একটি বিষয়টি বিশ্বাস করি, এই রানও আমাদের পক্ষে তাড়া করা সম্ভব। এখানে কারো মধ্যে কোন দ্বিধা কাজ করে না। কেউ কখনো বলে না আমি এ ব্যপারে কিছুই জানিনা। আমাদের সকলের মধ্যেই সেই বিশ্বাস আছে। গত চার বছরে যে আত্মবিশ্বাসটা আমাদের মধ্যে জন্মেছে আশা করছি সেটা বিশ্বকাপেও দেখাতে পারবো। আশা করছি বিশ্বকাপটা যেন আমাদের সকলের জন্য সফল হয়।’
এদিকে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বিশ্বকাপের মঞ্চটা কোন সময়ই আশার আলো দেখাতে পারেনি। গত চারটি আসরে সেমিফাইনালেই থেমে যেতে হয়েছে প্রোটিয়াদের স্বপ্ন। যে কারনে এবারও কোচ ওটিস গিবসনের অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকা অন্যান্য সব দলের থেকে কিছুটা হলে বাড়তি চাপে থাকবে। যদিও গিবসনের মতে স্বাগতিক হিসেবে ইংল্যান্ডের ওপরই চাপটা বেশী। ইংল্যান্ডের বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে গিবসনের। ইংলিশ দুই তারকা পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস এন্ডারসনের সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল গিবসনের। দু’জনেই কেউই এখন আর ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেননা। তবে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে দুজনেই গিবসনকে বলেছেন, এবারের বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড জিততে না পারলেও তা খুবই খারাপ হবে। তাদের মতে ইংল্যান্ড ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ জিতে গিয়েছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার গিবসন আরো বলেন, ‘স্বাগতিক দল ছাড়াও ইংল্যান্ড বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর ওয়ানডে দল। তাদের বিপক্ষে বিশ্বকাপ শুরু করাটা দারুন একটি বিষয়। কারন এতে প্রমান হবে সত্যিকার অর্থেই আমাদের অবস্থানটা কি। সামনে এগিয়ে যাবার জন্য নিজেদের সেরাটা দেবার বিকল্প নেই। তবে টুর্নামেন্টে জিততে পারলেই এক নম্বর হওয়া যাবেনা।’
তারকা ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্সের অবসরের কারনে এবার দক্ষিণ আফ্রিকা ফাফ ডু প্লেসিসের নেতৃত্বে মাঠে নামছে। তবে তাদের টপ অর্ডারে আছেন আরেক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান কুইনটন ডি কক। নিজেদের দিনে কুইনটন ডি কক-ডু প্লেসিস জুটি যেকোন বোলারের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম।
কালকের ম্যাচে অবশ্য কাঁধের ইনজুরির কারনে খেলতে পারছেন না অভিজ্ঞ ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন। যদিও সাম্প্রতীক সময়ে তাকে ছাড়াই বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছে প্রোটিয়ারা। স্টেইনের অনুপস্থিতিতে কাল দক্ষিণ আফ্রিকান পেস আক্রমনের মূল দায়িত্ব পালন করবেন তরুন কাগিসো রাবাদা। পিঠের ইনজুরি কাটিয়ে নিজেকে পুরোপুরি ফিট প্রমান করেছেন রাবাদা। টেস্ট ও ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচ বোলারের মধ্যে থাকা ২৪ বছর বয়সী এই পেসারের ওপর নি:সন্দেহে আস্থা রাখতে পারেন ডু প্লেসিস, সাম্প্রতীক পরিসংখ্যান অন্তত তারই প্রমান দেয়।
দল :
ইংল্যান্ড : ইয়োইন মরগান (অধিনায়ক), মঈন আলী, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, টম কারান, লিয়াম প্লানকেট, আদিল রশিদ, জো রুট, জেসন রয়, বেন স্টোকস, ডেভিড উইলি, ক্রিস ওকস, মার্ক উড, জেমস ভিন্স, জোফরা আর্চার।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ফাফ ডু প্লেসিস (অধিনায়ক), হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, জেপি ডুমিনি, ইমরান তাহির, আইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, লুঙ্গি এনগিডি, ক্রিস মরিস, আন্দিও ফেলুকুয়াও, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, কাগিসো রাবাদা, তাবরিজ শামসি, ডেল স্টেইন, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন।