স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অর্থদাতা হাওয়া ভবনের তৎকালীন কর্মচারী শামসুজোহা ফরহাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং লন্ডনে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রংপুরের শামসুজোহা ফরহাদ বিএনপি সরকারের সময় হাওয়া ভবনের কর্মচারী ছিলেন। ড্যান্ডি ডাইংয়ে কাজ করার সুবাদে তারেক রহমানের সংস্পর্শে আসেন তিনি। এরপর থেকে তাকে আর পিছু তাকাতে হয়নি। হাওয়া ভবনের কর্মচারী ও তারেক রহমানের সংস্পর্শে এসে রাতারাতি বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স, এফডিআরসহ নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন শামসুজোহা। বর্তমানে তিনি মিরপুর রূপনগরের ছয়তলাবিশিষ্ট নিজস্ব বাসায় থাকেন।
হাওয়া ভবনের ওই কর্মচারী তারেক রহমানের টাকায় কোটিপতি হয়েছেন। শামসুজোহার সব অর্থই মূলত তারেক রহমানের দেওয়া। বর্তমানে শামসুজোহার উপার্জন থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই তারেক রহমান লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এ জন্য দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি কমিশন এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুদক সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে নথিপত্র তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ আগামী সপ্তাহের মধ্যে চাহিদা অনুসারে নথিপত্র দুদকে আসবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
দুদক সূত্র আরও জানায়, অভিযোগ অনুসন্ধানে দেশে ও বিদেশে তারেক রহমানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব আছে কি না— তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে চিহ্নিত কিছু ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবেরও তথ্য নেবে দুদক। বর্তমানে জ্ঞাত কোনো আয় না থাকলেও লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তারেক রহমান। বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই সরকারের আমলে তারেক রহমান নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। তার ওই সম্পদের কিছু অংশ শামসুজোহাকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৬ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রায়ে তারেককে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। মামুনকে অর্থদণ্ডসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তারেক রহমানের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্জ তারেক রহমানের ওই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
তারেক রহমানকে অর্থ পাচার মামলা থেকে খালাস দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোতাহার হোসেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসরে যান। ২০১৪ সালে অবসরপ্রাপ্ত ওই বিচারকের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। যা এখনো চলছে। অভিযোগটিও দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ অনুসন্ধান করছেন।