অগ্রসর রিপোর্ট : দ্বাদশ বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফেবারিট ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান। কিন্তু মাঠের লড়াই শুরুর পর পারফরমেন্সে যাচ্ছেতাই অবস্থা দু’দলের। এখন পর্যন্ত মাত্র ১টি করে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান। তবে ৬ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪টি ও ৫ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৩টিতে হারে পাকিস্তান। বৃষ্টির কারনে তাদের ১টি ম্যাচ পরিত্যক্তও হয়। তাই সমান ৩ পয়েন্ট সংগ্রহে রয়েছে তাদের। এই অবস্থায় সেমিফাইনালে দৌঁড়ে বেশ পিছিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান। সেমির লড়াইয়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে জয় ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই দু’দলেরই। উভয় দল একই লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল বিশ্বকাপের ৩০তম ম্যাচে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান। ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে দু’দলের ম্যাচটি।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই মাঠে নেমেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রতিপক্ষ ছিলো স্বাগতিক ইংল্যান্ড। কন্ডিশন ও ফর্মের তুঙ্গে থাকা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐ ম্যাচে ফেভারিট হতে পারেনি প্রোটিয়ারা। মাঠের লড়াইয়েও সেই চিত্র দেখা যায়। ইংল্যান্ডের সাথে লড়াইয়ে ছিটেফটাও দেখাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ হারে প্রোটিয়ারা।
ইংল্যান্ডের কাছে হারের পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আরও বড় ধরনের ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের কাছে ২১ রানে হারে তারা। টানা দুই হারের স্বাদ নিয়ে ভারতের মুখোমুখি হয় প্রোটিয়ারা। টিম ইন্ডিয়ার সাথেও হারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬ উইকেটে কোহলির দলের কাছে হেরে বিশ্বকাপে হ্যাট্টিক পরাজয়ের স্বাদ নেয় প্রোটিয়ারা।
হ্যাট্টিক হারকে সঙ্গী করে চতুর্থ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রকৃতির সহায়তায় ঐ ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট অর্জন করতে পারে প্রোটিয়ারা। বৃষ্টির কারনে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় এবারের আসরে প্রথম পয়েন্টের দেখা পায় ডু-প্লেসিস-আমলারা। আর পরের ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে প্রথম জয়ের স্বাদ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু পরের ম্যাচে আবারো হারের বৃত্তে চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪ উইকেটে ম্যাচ হারে প্রোটিয়ারা। তাই সেমিফাইনালে খেলার পথ অনেকাংশেই কঠিন হয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। তারপরও শেষ তিন ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে ভাগ্যের জোড়ে সেমিতে যাবার স্বপ্ন দেখছে চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা।
এ জন্য শেষ তিন ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই দক্ষিণ আফ্রিকার। একটি ম্যাচ হারলেই তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। এমন সমীকরন জানেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিস। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কোন সুযোগই নেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের জন্যই মাঠে নামবো আমরা।’
দক্ষিণ আফ্রিকা যতটা না বিপদে আছে, পাকিস্তান ততটা না। তারপরও পাকিস্তানের সেমিতে যাবার পথ কঠিনই বটে। সেই পথকে সহজ করতে হলে বাকী চার ম্যাচেই জিততেই হবে তাদের। তিন ম্যাচ জিতলেও, আশা থাকবে তবে অনেক সমীকরনের উপর নির্ভর করতে হবে পাকিস্তানকে।
দুঃস্বপ্নের মত এবারের বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান। নটিংহামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিং-এ নামে পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলারদের তোপে ২১ দশমিক ৪ ওভারে মাত্র ১০৫ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান। ক্যারিবীয়দের ওশানে থমাস ৪টি, অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ৩টি, আন্দ্রে রাসেল ২টি ও শেলডন কটরেল ১টি উইকেট নেন। পাকিস্তানের এই মামুলি টার্গেট ২১৮ বল বাকী রেখেই স্পর্শ করে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দুঃস্বপ্নের হারের পর দারুনভাবে ঘুড়ে দাঁড়ায় পাকিস্তান। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারায় তারা। ১৪ রানে জয় তুলে নেয় সরফরাজের দল। এই জয়ে দারুন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে পাকিস্তান। সেই আত্মবিশ্বাস পরের ম্যাচে কাজে লাগেনি। কারন শ্রীলংকার বিপক্ষে পরের ম্যাচটি বৃষ্টির কারনে ভেস্তে যায়। ফলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে দু’দল।
কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম ম্যাচে আবারো হারের লজ্জায় ডুব দিতে হয় পাকিস্তানকে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪১ রানে ম্যাচ হারে। এতে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে তাদের। এ অবস্থায় চিরপ্রতিন্দ্বনিন্দ ভারতের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। সেই লড়াইয়ে অসহায় আত্মসমর্পন করে হাফিজ-মালিকরা। বৃষ্টি আইনে ভারতের কাছে ৮৯ রানে হেরে যায় পাকিস্তান।
ভারতের কাছে হারের পর সমালোচনার তীরে বিদ্ধ পাকিস্তান দল। এর মাঝে ঘুড়ে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যে অবস্থায় আছি, সেখান থেকে আমাদের ঘুড়ে দাঁড়াতে হবে। একটি জয়ই দলের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে। তাই কালই জয় তুলে নিতে চাই আমরা।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের জয়ের রেকর্ড ভালো নয়। এখন পর্যন্ত ৭৮ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এরমধ্যে ৫০টিতে জিতেছে প্রোটিয়ারা। ২৭টি ম্যাচে জয় পাকিস্তানের। চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে পাকিস্তান। দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর শেষ ম্যাচ হেরে সিরিজ হাতছাড়া করে পাকিস্তান।