ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের পোড়াহাটি গ্রামের জঙ্গি আস্তানায় শনিবার সকাল থেকে দুপুর আড়ইটা পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়েছে। আইন শৃংখলা বাহিনী এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘সাউথ প’। সকালে প্রথমে ওই বাড়ির টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। এরপর বাড়ির মধ্যে কোনো জঙ্গি না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে অভিযান পরিচালনা করেন।
১১.৫০ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জঙ্গি আস্তানা থেকে ৫টি বোমা নিস্ক্রিয় করে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে আরো ৫টি বোমা।
খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দিদার আহমেদ শনিবার বিকাল ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে করে অপারেশন ‘সাউথ প’ এর সমাপ্তি ঘোষণা করে জানিয়েছেন, বাড়ির মধ্যে থেকে কাউন্টার টেরোরিজম এর সদস্যরা ২০ টি ড্রামে ‘হাইড্রোজেন পাওয়ার অক্সাইড’ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও সেখান থেকে ১টি একটি পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি, ৫টি বোমা, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ১টি প্রেসার কুমার বোম, ১টি চাপাতি, ১০০ প্যাকেট লোহার বল, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ১৫/১৬টি ‘জিহাদি বই’ উদ্ধার করা হয়।
দুপুর আড়াইটার দিকে এ অভিযান শেষ হয় বলে নিশ্চিত করেছেন খুলনা অতিরিক্ত ডিআইজি দিদার আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবার আলী।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গি সন্দেহে পোড়াহাটির ঐ বাড়িটি ঘিরে রাখে। শনিবার সকালে মাইকিং করে এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়। কাউন্টার টেরোরিজম এর দুটি ইউনিট, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা অপারেশন ‘সাউথ প’-তে অংশ নেন।
আব্দুল্লাহ কে নিয়ে নানা প্রশ্ন :
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে যে বাড়িটিতে ঘিরে রেখেছিল ও অভিযান পরিচালনা করেছিল সেই বাড়ির মালিকের নাম আব্দুল্লাহ। তিনি হিন্দু ধর্ম থেকে ৩/৪ বছর আগে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করেন। এর আগে আব্দুল্লাহর নাম ছিল প্রবাদ কুমার। তার বাবার নাম চৈতন্য বয়াতি বলে স্থানীয়রা জানায়।
হিন্দু ধর্মে থাকার সময় তার স্ত্রী ও একটি ছেলে সন্তান ছিল। তবে ইসলাম ধর্ম গ্রহনের পর তিনি সদর উপজেলার পোড়াহাটি ধানহাড়িয়া চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়েকে বিয়ে করেন। স্থানীয়রা আরো জানান, আব্দুল্লাহ নিজের পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এই বাড়িতে থাকতেন। দুই রুম বিশিষ্ট টিনসেড বাড়িটিতে আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রীই থাকতেন। তার স্ত্রী বাইরে তেমন যেতেন না।
প্রতিবেশিরা আরো জানান, আব্দুল্লাহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করতেন। কখনো নছিমন চালাতেন, কখনো ছোটোখাটো ব্যবসা করতেন । তবে গত ৩/৪ মাস ধরে তাকে একটি মটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। অভিযানের সময় আব্দুল্লাহ বা তার স্ত্রীকে বাড়িতে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।