অগ্রসর রিপোর্ট : কৃষি, পাট, সামুদ্রিক মাছ ধরাসহ গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে চায় চীন। ঢাকায় চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নিতে আসা চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এই মন্তব্য করেন। রোববার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় অনুপ্রাণিত হয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
চীনা মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ভোক্তা প্রবণতা তাঁকে বিস্মিত করেছে। তিনি বলেন, রাত ১০টার পরও বিপণিবিতানে মানুষের ভিড় দেখে বোঝা যায়, বাংলাদেশের বাজার কতটা প্রাণবন্ত। তাঁর মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে। প্রধান উপদেষ্টা এ সময় বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলে এখনো বিপুল সম্ভাবনা অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে, বিশেষ করে কৃষি এবং সামুদ্রিক ও নদীকেন্দ্রিক মাছ চাষে। তাঁর মতে, চীনের সহযোগিতায় প্রতিটি গ্রামকে উৎপাদন ইউনিটে রূপান্তর করা সম্ভব।
কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে ওয়েনতাও বলেন, চাষের জমি উন্নয়ন, পানি সংরক্ষণ ও আধুনিক চারা রোপণ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীন আগ্রহী। তাঁর মতে, কৃষি কেবল একটি শিল্প নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সংগঠন। মাছ ও সামুদ্রিক অর্থনীতি বিষয়ে তিনি বলেন, চীন গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার প্রযুক্তিতে বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চায়।
চীনা মন্ত্রী বলেন, চীন প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলারের পাট আমদানি করে, যা বাংলাদেশের মোট পাট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ। গবেষণা ও পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে পারলে এই পরিমাণ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। অধ্যাপক ইউনূসের পাট খাত পুনরুজ্জীবনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীনা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের পাটপণ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
গবেষণায় যৌথ অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে ওয়েনতাও বলেন, বাংলাদেশ যদি গবেষণায় অংশ নেয়, তাহলে পাট চীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হয়ে উঠবে। প্রধান উপদেষ্টা এ সময় বলেন, বাংলাদেশের পাট ডিজাইনাররা চীনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে পারেন। তিনি চীনা মন্ত্রীর আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের প্রশংসা করে চীনকে বাংলাদেশের পাশে বন্ধুর মতো থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চীনা মন্ত্রীর কথা তাঁর কানে সংগীতের মতো শোনায়। তিনি চীনা প্রতিনিধি দলের উষ্ণ ভাষণ এবং বড়সংখ্যক বিনিয়োগকারী নিয়ে আসায় সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, এত বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারী এসেছেন, যা পুরো জাতির কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। এ সময় তিনি তাঁর সাম্প্রতিক চীন সফরের কথাও স্মরণ করেন এবং বলেন, সেই সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, যা এই সফরের মাধ্যমে আরও সুদৃঢ় হবে।