অগ্রসর রিপোর্ট : দেশে করোনা আক্রান্ত ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে এ ভাইরাসে শনাক্ত ৩০ হাজার ২০৫ জন রোগী রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ৯ হাজার ৭২৭টি নমুনা পরীক্ষায় দেশে ১ হাজার ৬৯৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। দেশে এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৩২ জন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ১৯০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৫৮৮ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৭৯ জন কম আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৭৩ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ হাজার ৯৯৩টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ১০ হাজার ১৭৪টি। গতকালের চেয়ে আজ ১৮১টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৪৭টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১০ হাজার ২৬২টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৫৩৫টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৪১টি।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারী ২৪ জনের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মাধ্যে ২ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সুস্থতার হার ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৯ জন, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের রয়েছেন ১ জন করে। ২৪ জনের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ১৫ জন, বাড়িতে মারা গেছেন ৮ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় ১ জনকে।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ২২৫ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন চার হাজার ৬০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৬২ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ২৮ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে আছে ৬ হাজার ৩৪টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০৬টি।
তিন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৫৬০ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ লাখ ৫৮হাজার ৯৪ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ১৯ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ২ লাখ ৩ হাজার ১৭১ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৪ হাজার ৯২৩ জন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রেন্টাইনের জন্য ৬২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৮৪০ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ১৭ হাজার ১০৭টি। বিতরণ হয়েছে ২৮ হাজার ৮১০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ২৪ লাখ ৬ হাজার ৪২৭টি। বিতরণ হয়েছে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৩২টি।বর্তমানে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৫টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ২ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৬টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ ৬৭ হাজার ৭১২টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ১২৩ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১১ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১২ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় আগত ১ হাজার ৫২৬ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।
ঈদে গ্রামে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘যে যেখানে আছেন, সেখানেই অবস্থান করুন। শহর থেকে গ্রামের দিকে যাবেন না। যে প্রিয় আত্মীয়-পরিজনের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য আপনি শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে চাচ্ছেন, আপনার কারণে সেই প্রিয়জন যেন ঝুঁকিতে না পড়ে।’
তিনি বলেন, করোনার কারণে যে যুদ্ধাবস্থা চলছে, তার বিরুদ্ধে সবাইকে যুদ্ধের মানসিকতা রাখতে হবে। লড়াইয়ের মানসিকতা রাখতে হবে।
ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনসাধারণ তথা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, আপনাদের জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক, নার্স বা ফার্মাসিস্ট, টেকনোলজিস্ট, গাড়িচালক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী অসুস্থ হয়েছেন; আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের সদস্য, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ অনেকেই অসুস্থ হয়েছেন এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। অনুগ্রহ করে আপনারা সহযোগিতা করুন। সরকারের সকল নির্দেশনা মেনে চলুন। চলাচল বন্ধ করুন। নিজে সুস্থ থাকুন, প্রিয়জনকে সুস্থ রাখুন।’