কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : ভাত নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই, নেই মাথা গুজার ঠাঁই। দূর্গত বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মানুষ এখনো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ঘূণিঝড়ে বিদ্যুৎতের খুটি ভেঙ্গে যাওয়া এবং এই ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জেলার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ রয়েছেন বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে। ঘূনিঝড়ে সৃষ্ট এই পরিস্থিতে কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে এখনও পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি বলে অভিযোগ ও উঠেছে। এসব এলাকার দুর্গত মানুষেরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।
তবে জেলা প্রশাসন বলছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’য় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পর্যায়ক্রমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় সরকারি কোনও ত্রাণ পৌঁছেনি। এমনকি কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ফদনার ডেইল, বন্দরপাড়া ও চরপাড়ায় এলাকায় এখনও সরকারি ত্রাণ তো দূরের কথা, ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করার জন্য কোনও কর্মচারীও সেখানে যাননি। তবে এসব উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ফদনারডেইল এলাকার রশিদা বেগম, মোহাম্মদ মিয়া, মোহাম্মদ আয়ুব, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল মতলব, চরপাড়া এলাকার মাহমুদ আলী, নুরুন্নাহার, আক্তার কামাল, মনির আহমদ, শফিকুর রহমান ও বন্দরপাড়া এলাকার সায়েদা আক্তার, নুর বেগম ও মোহাম্মদ ইসমাইলসহ অনেকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে তাদের বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
এসময় বাড়িতে না থাকায় অনেকের বাড়ি লুট হয়ে গেছে। দুর্বৃত্তরা নিয়ে গেছে বাড়িতে থাকা মূল্যবান সামগ্রী। বর্তমানে তারা খোলা আকাশে নিচে দিন যাপন করছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর থেকে তাদের খবর নিতে কোনও সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এমনকি কোনও সাহায্যকারী সংগঠন এলাকায় যাননি। পৌঁছেনি সরকারি-বেসরকারি কোনও ত্রাণ সামগ্রী।
ওই এলাকার কাউন্সিলর এসআই আকতার কামাল বলেন, তার নির্বাচিত এলাকা সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, নাজিরটেক, ফদনারডেইল, বন্দরপাড়া ও চরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এক হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের তালিকাও করা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে এখনও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। অবশ্য ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
এদিকে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় ধারাবাহিকভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গত দুই দিনে মহেশখালী উপজেলায় ২৯ টন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ ২০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১২ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ ৫০ হাজার টাকা, চকরিয়া উপজেলায় ১৭ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ এক লাখ টাকা, পেকুয়া উপজেলায় ১৩ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ ৫০ হাজার টাকা, কুতুবদিয়া উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ দুই লাখ টাকা, টেকনাফ উপজেলায় ১৩ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ এক লাখ টাকা, উখিয়া উপজেলায় তিন মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী ও পৌরসভাগুলোয় ১২ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ এক লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় কবলিত দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ধীরে ধীরে সব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হবে। গত দুই দিনে ১১৯ মেট্রিক টন ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। পরে পর্যায়ক্রমে আরও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এই পর্যন্ত ৫২ হাজার ৫৩৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭ হাজার ২৩টি পরিবার এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৫১৬টি পরিবার। এ সময় গাছের নিচে চাপা পড়ে ৫ জন নিহত ও অন্তত ৬০জন আহত হয়েছে। এছাড়াও রামু উপজেলায় প্রায় ৩০ একর, উখিয়ায় ৪০২ একর, টেকনাফে ১৩৮২ একর ও মহেশখালীতে ১৪৮১ একর জমির ফসল ও পানের বরজের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।