সংলাপে আটটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলো হলো-
১. নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাই এর প্রতি তদ্রুপ মান্যতা ও মর্যাদা থাকতে হবে যাতে করে নির্বাচন পরিচালনা, তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন পরিবেশে কাজ করতে পারে।
২. সংবিধানের ১১৮ বিধি বাস্তবায়নার্থে আইনের বিধানাবলি অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি আইন তৈরি করা। রাষ্ট্রপতি জরুরি ভিত্তিতে সংসদ অধিবেশন ডেকে বা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইন প্রণয়ন করতে পারেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় লাগতে পারে।
৩. এই আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণ নিয়োগের জন্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে এই সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠিত হবে। এই সাংবিধানিক কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির নিকট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পরামর্শ মতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ করবেন।
৪. বিকল্প হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন। প্রধান বিচারপতি, দুদক চেয়ারম্যান, মহাহিসাব রক্ষক ও নিয়ন্ত্রক ও অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের নিয়ে এই সার্চ কমিটি গঠন হতে পারে। এ কমিটি কমিশনের প্রতিটি পদের বিপরীতে তিনজনের নাম প্রস্তাব করবে। সার্চ কমিটির দেয়া নামের তালিকা সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটি যাচাই-বাছাই করবে। সেখান থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি এ তালিকা থেকে নিয়োগ দেবেন।
৫. নির্বাচন কমিশনের সদস্য হবে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট, যার মধ্যে দু’জন নারী সদস্য থাকবেন।
৬. আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর সংজ্ঞায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রস্তাব বিএনপি বা অন্য দলসমূহ করেছে তা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।
৭. যুদ্ধাপরাধে দায়ে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হয়েছেন বা কোনো সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন ব্যক্তিবর্গ যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ প্রস্তাবিত আইনে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৮. নির্বাচনে টাকার খেলা, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ আইনে নিষিদ্ধ থাকতে হবে।
সংলাপে প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা , পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, নুরুল হাসান, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, ইকবাল কবির জাহিদ, হাজেরা সুলতানা, কামরূল আহসান, অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন গঠনে দলের প্রস্তাবনা রাষ্ট্রপতির সদয় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করবে প্রতিনিধি দলটি। আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতিকে জরুরি সংসদ অধিবেশন ডাকারও প্রস্তাব করবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের এই শরিক দলটি। অধিবেশনটি ১৫ দিন থেকে ১ মাস সময়ে পেলেই এই আইন প্রণয়ন সম্ভব বলেও পরামর্শ দেবে দলটি। আজকের বৈঠকে দলটি এই প্রস্তাবনা তুলে ধরবে। দলটির একাধিক নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে নেতা এসব তথ্য জানান।
উল্লেখ্য, ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাসদ গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে। এর আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে গত ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইসি গঠনের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করে জাতীয় পার্টিও।