অগ্রসর রিপোর্ট: দখলদার ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা এবং ইরানের সাম্প্রতিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘আইনগত ও বৈধ’ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, এই হামলা ইরানের ন্যায্য অধিকার এবং ইসরায়েলের জন্য ন্যূনতম শাস্তি।
লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাত এবং ইসরায়েলে হামাসের হামলার এক বছর পূর্তি সামনে রেখে শুক্রবার তেহরানে ইমাম খোমেনী (রহ.) মুসাল্লায় জুমার নামাজের খুতবায় এসব কথা বলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। খামেনি খুতবা শুরুর আগেই সেখানে লাখো মানুষ জড়ো হন।
খুতবায় মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যের ডাক দিয়ে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ‘আমাদের শত্রুপক্ষ মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ ছড়িয়ে দিতে বিভাজন ও ঘৃণার বীজ বপন করার নীতি অবলম্বন করে। একই পক্ষ আবার ফিলিস্তিনি, লেবাননি, মিশরীয় এবং ইরাকিদেরও শত্রু। তারা ইয়েমেনি ও সিরীয়দের শত্রু। আমাদের শত্রু একই।’
খামেনি বলেন, আমাদের শত্রুদের গৃহীত নীতি হলো বিভাজন ও রাষ্ট্রদ্রোহের বীজ বপন করা। মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করা। ফিলিস্তিনি, লেবানিজ, মিসরীয় ও ইরাকিদের শত্রু একজনই। তারা ইয়েমেন ও সিরিয়ার জনগণের শত্রুও। আমাদের সবার শত্রু একই।
আগ্রাসনকারীদের হাত থেকে আত্মরক্ষার অধিকার প্রতিটি দেশেরই রয়েছে উল্লেখ্য করে গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং ইরানের সাম্প্রতিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ‘আইনত ও বৈধ’ বলেও জানান ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ‘তেহরানের জুমার নামাজে আমার ভাই, আমার প্রিয় মানুষ, আমার গর্ব, মুসলিম বিশ্বের প্রিয় মুখ, এই অঞ্চলের জাতিগুলোর কণ্ঠস্বর এবং লেবাননের উজ্জ্বল রত্ন হাসান নাসরুল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেছি।’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ সম্পর্কে আরও বলেন, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ আর আমাদের মধ্যে নেই। তবে তার আদর্শ ও তার দেখানো পথ আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে। তার শাহাদাত এই আন্দোলন আরও জোরদার হবে। নাসরুল্লাহর জীবনদান বৃথা যাবে না। নাসরুল্লাহ সত্যসন্ধানী ও সত্যপথের সংগ্রামীদের উৎসাহ ও সাহসের উৎস ছিলেন। তার জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের পরিধি লেবানন, ইরান ও আরব দেশগুলোর গণ্ডিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই মহান ব্যক্তির শাহাদাত তার প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
তিনি বলেন, জীবদ্দশায় লেবাননের জনগণের প্রতি শহীদ নাসরুল্লাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছিল এই যে, ইমাম মুসা সাদ্র ও সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের হারিয়ে হতাশ হবেন না। নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করুন, আগ্রাসী শত্রুর মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলুন এবং তাদের পরাজিত করুন।
খামেনি বলেন, ‘হে আমার প্রিয়ভাজনেরা! লেবাননের প্রতিশ্রুতিশীল জাতি! হিজবুল্লাহ ও আমাল আন্দোলনের উচ্ছ্বসিত যুব সমাজ! হে আমার সন্তানেরা! আজও আমাদের প্রিয় শহীদ হাসান নাসরুল্লাহ তার দেশের জনগণ, প্রতিরোধ ফ্রন্ট এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর কাছে এটাই চান।’ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন,‘ হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইসলামি জিহাদের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোর বড় কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম নয় বলেই নিকৃষ্ট ও অসভ্য শত্রু দখরদার ইসরায়েল বেসামরিক মানুষ হত্যাকে নিজের বিজয়ের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করছে।’আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেছেন, বেসামরিক মানুষদের ওপর ইসরায়েলি বোমা হামলা ও হত্যার পরিণতিতে জনরোষ বাড়বে। (আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে) মানুষ আরও অনুপ্রাণিত হবে, জীবন উৎসর্গ করার মনোভাব বাড়বে, রক্তপিপাসু জায়নবাদী নেকড়েদের ঘাড়ের চারপাশের ফাঁসটা আরও টাইট হবে এবং চূড়ান্তভাবে তাদের অস্তিত্ব নির্মূল হয়ে যাবে।সূত্র: আল জাজিরা, পার্সটুডে