অগ্রসর রিপোর্ট : চলতি বিশ্বকাপে বড় দলগুলোর কাছে যেনো এক আতঙ্কের নাম আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় আফগানিস্তান। আজ নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে আরেক বড় দল পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে আবারও ইতিহাস সৃষ্টি করলো আফগানিস্তান। আর পাকিস্তান পেলো হ্যাট্রিক হারের স্বাদ। ওয়ানডেতে এর আগে সাতবারের দেখায় পাকিস্তানকে কখনোই হারাতে পারেনি আফগানিস্তান।
চেন্নাইয়ে এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে সোমবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভারে পাকিস্তান যখন আফগানিস্তানকে ২৮৩ রানের লক্ষ দেয়, তখন মনে হচ্ছিলো এটা যেনো পাহাড়সম টার্গেট। কিন্তু এই পাহাড়সম কঠিন কাজকেই আজ সহজ করে দিলেন দুই আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। তাদের ইনিংসে ভর করেই নিজেদের ইতিহাসেই সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়ল আফগানিস্তান।
এই দুই ওপেনারের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ওপেনিং জুটিতে ১৩০ রানে তোলে আফগানরা। যা তাদের জয়ের পথকে মসৃণ করে। এই দুই ওপেনারের বিদায়ের পর রহমত শাহর অপরাজিত ৭৭ রান ও হাশমতউল্লাহ শহিদির অপরাজিত ৪৪ রানে ভর করে ৬ বল বাকি থাকতেই ২ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান।
আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান শুরু থেকেই পাকিস্তানি বোলারদের ওপর চড়াও হতে শুরু করেন। তারা দেখেশুনেই এগোতে থাকেন।
দলীয় ৩০ রানে হাসান আলিরক কট বিহাইন্ডের আবেদনে সাড়া দিয়ে ইব্রাহিম জাদরানকে আউট দেন ফিল্ড আম্পায়ার। আর তাতে রিভিউ নেন ইব্রাহিম জাদরান। সফলও হন তিনি।
এরপর এই জুটি আর চড়াও হন পাকিস্তানি বোলারদের ওপর। এই জুটিতে ভর করে প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬০ রান তোলে আফগানিস্তান। আর ১৫ ওভারেই পার করে দলীয় শতক।

এরই মধ্যে এই ওপেনার তুলে নেন নিজেদের ব্যক্তিগত অর্ধশতক। ইব্রাহিম জাদরান আজ ৫০ রান করেন ৫৪ বলে। যার মধ্যে রয়েছে ৮টি চারের মার। অন্যদিকে আরেক ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ নিজের অর্ধশতক তুলে নেন ৩৮ বলে। যার মধ্যে রয়েছে ৯টি চারের মার।
শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলি,হারিস রউফ,উসামা মীর ও শাদাব খান চেষ্টা করেও ভাঙতে পারছিলেন না এই জুটি। ক্রমেই আফগানিস্তানের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছল এই জুটি।
অবশেষে এই জুটি ভাঙেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। শাহিন আফ্রিদির বলে ৫৩ বলে ৬৫ রান করা রহমানউল্লাহ গুরবাজ ডিপ থার্ড ম্যানে উসামা মিরের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। উসামা মির ক্যাচটি তালুবন্দী করে নেন সহজে। ফলে ৬৫ রানে সাজঘরে ফেরেন গুরবাজ। তার বিদায়ে ১৩০ রানে ভাঙে আফগানদের ওপেনিং জুটি।
গুরবাজের বিদায়ের পর রহমত শাহকে নিয়ে জুটি বাঁধেন ইব্রাহিম জাদরান। এই জুটি থেকে আসে ৬০ রান। দলীয় ১৯০ রানে ইব্রাহিম জাদরানের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। সেঞ্চুরির আশা জাগানো জাদরান ১১৩ বলে ৮৭ রান করে শিকার আলির শিকার হয়ে ফিরে যান সাজঘরে।

১৯০ রানে ২ উইকেট হারনোর পর জুটি বাঁধেন রহমত শাহ ও হাশমতউল্লাহ শহিদি। এর মাঝেই ব্যাক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন রহমত শাহ।
আজ তিনি ৫৮ বলে তুলে নেন অর্ধশতক। যার মধ্যে রয়েছে ৪ টি চার ও একটি ছয়ের মার। শেষ পর্যন্ত এই দুই ব্যাটার জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। রহমত শাহ অপরাজিত থাকেন ৭৭ রানে আর ও হাশমতউল্লাহ শহিদি অপরাজিত থাকেন ৪৪ রানে।
এর আগে পাকিস্তানের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামা দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল হক শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন। আফগান বোলারদের কোনো সুযোগই দিচ্ছিলেন না তারা। এই জুটিতে ভর করে প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৬ রান তোলে পাকিস্তান। কিন্তু এরপরেই ঘটে ছন্দপতন। দলীয় ৫৬ রানে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার ইমাম-উল হক। ২২ বলে ১৭ রান করা ইমাম আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে নাভিন-উল হকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। তার বিদায়ে ৫৬ রানে ভাঙে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি। ৫৬ রানে ১ উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক বাবর আজমকে নিয়ে জুটি গড়েন আব্দুল্লাহ শফিক। এর মাঝেই শফিক তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক।
৬০ বলে ৫০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ৪টি চারের মার ও ২টি ছয়ের মার। এই জুটিতে ভর করে পাকিস্তান ২০ ওভারে দলীয় শতক তুলে নিয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নিলেও নিজের ইনিংসে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি আব্দুল্লাহ শফিক। নুর আহমেদের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। আউট হওয়ার আগে করেন ৭৫ বলে ৫৪ রান।

শফিকের পর বেশি সময় ক্রিজে থাকতে পারেননি আগের ম্যাচে ৪৬ রান করা মোহাম্মদ রিজওয়ান। নুর আহমেদের বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। শর্ট ফাইন গেলে দাঁড়িয়ে থাকা মুজিব উর রহমান ক্যাচটি তালুবন্দী করতে ভুল করেননি। যার ফলে মাত্র ৮ রান করে ফিরে যান তিনি। রিজওয়ানের বিদায়ের পর সৌদ শাকিলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন বাবর আজম। এই জুটি থেকে আসে ৪৩ রান। দলীয় ১৬৩ রানে সৌদ শাকিলের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। ৩৪ বলে ২৫ রান করা শাকিল মোহাম্মদ নবির বলে রশিদ খানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান। তার বিদায়ে ১৬৩ রানেই ৪ উইকেট হারায় পাকিস্তান। শাকিলের বিদায়ের পর শাদাব খানের সঙ্গে জুটি গড়েন বাবর আজম। এরই মাঝে ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন বাবর। ৬৯ বলে ৫০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে তিনটি চারের মার।
তবে এই জুটিও বেশিদূর এগোতে পারলো না। নুর আহমেদের তৃতীয় শিকার হয়ে বাবর আজম প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে ভেঙে যায় এই জুটি। সেঞ্চুরির আশা জাগানো বাবর ৯২ বলে ৭৪ রান করে নুর আহমেদের বলে এক্সট্রা কাভারে মোহাম্মদ নবির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ২০৬ রানে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান। বাবরের বিদায়ের পর জুটি বাঁধেন শাদাব খান ও ইফতিখার আহমেদ। এই জুটি থেকে আসে ৭৩ রান। দলীয় ২৭৯ রানে ইফতিখার আহমেদের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। ২৭ বলে ৪০ রান করা ইফতিখার আহমেদ নাভিন-উল হকের বলে ডিপ এক্সট্রা কাভারে রাশিদ খানের হাতে ক্যাচে তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮২ রান তুলে পাকিস্তান।
আফগানিস্তানের হয়ে নুর আহমেদ ৩ টি, নাভিন-উল হক ২ টি, মোহাম্মদ নবি ১ টি ও আজমতুল্লাহ ওমরজাই ১ টি উইকেট নেন।