‘বোলিংয়ের যে শক্তি, সেটির পাশাপাশি (ভালো) ফিল্ডিং করে ওদের যত কম রানের মধ্যে আটকে রাখা (যায়)। আর আগে ব্যাটিং করলে অবশ্যই হেলদি টার্গেট দেওয়ার চেষ্টা করব।’
আজকের ম্যাচের লক্ষ্যের কথা গতকাল এভাবে জানিয়েছিলেন লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন। টসে জিতে আগে ব্যাটিং নেওয়া বাংলাদেশের হয়ে ফাহিমা যখন নামলেন, ২৫ রানে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে ৩ উইকেট। অস্ট্রেলিয়াকে এরপর যে লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ, তা মোটেও ‘হেলদি’ কিছু নয়। শুরুতে একটু হোঁচট খেলেও ৬ উইকেট ও ১৫৭ বল বাকি থাকতেই ৯৮ রানের সে লক্ষ্য পেরিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া, আগামী বুধবার শেষ ম্যাচের আগেই নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়ও।
রান তাড়ায় ফিবি লিচফিল্ডের রানআউটে প্রথম ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। জন্মদিনে নিজের ইনিংস খুব একটা বড় করতে পারেননি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যালিসা হিলিও, রাবেয়া খানকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন ১৫ রান করেই। মাঝে বেথ মুনির সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন মারুফা, তবে দ্বিতীয় জীবনে আর ২ রান করেই মুনি থামেন সুলতানার বলে স্টাম্পিং হয়ে।
৩৯ রানে ৩ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে এরপর পার করেন এলিস পেরি। মেয়েদের আইপিএলের ফাইনালের মতোই ইনিংস ধরে রেখে অপরাজিত ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন এ অলরাউন্ডার। তালিয়া ম্যাকগ্রার সঙ্গে ২১ রানের পর অ্যাশলেই গার্ডনারের সঙ্গে তাঁর অবিচ্ছিন্ন ৩৮ রানের জুটিতেই নিশ্চিত হয় অস্ট্রেলিয়ার জয়।
এমনিতে স্পিন বোলিংকে ধরা হয় বাংলাদেশের অন্যতম শক্তি, অস্ট্রেলিয়ার যে দুটি উইকেট বোলাররা পেয়েছেন, দুটিই নিয়েছেন দুই স্পিনার। তবে অস্ট্রেলিয়ান স্পিনারদের সামনে এ দিন নাভিশ্বাস উঠে গেছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে ৯৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া স্বাগতিকদের ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ান স্পিনাররাই নেন ৯ উইকেট। ১০ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন ২০২১ সালের পর প্রথমবার ওয়ানডে খেলতে নামা সোফি মলিনিউ। এ বাঁহাতি স্পিনার করেছেন ৫টি মেডেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ইনিংসে যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ।
মেঘাচ্ছন্ন কন্ডিশনে সকালে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশের দুই ওপেনার শুধু টিকেই থেকেছিলেন, সে অর্থে রান তুলতে পারেননি। ফারজানা ও সোবহানা নড়বড়ে থাকলেও অবশ্য দ্রুতই উইকেটের দেখা পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তারা প্রথম ব্রেকথ্রু পায় নবম ওভারে, মেগান শুটকে কাট করতে গিয়ে সোবহানা মোস্তারি হন কট বিহাইন্ড।
সোবহানার উইকেটের পর ফারজানা ঢুকে যান আরও খোলসের মধ্যে, মুর্শিদার সঙ্গে উইকেটে শুধু সময় কাটানোই লক্ষ্য ছিল তাঁর। তবে সেটি ঠিক সফল হয়নি। মলিনিউকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন তিনি ৫২ বলে ৭ রান করে। তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩.৪৬—বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ বলের ইনিংসে যা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।
মুর্শিদা খাতুন ও নিগার সুলতানা এরপর ফেরেন পরপর দুই ওভারে। গার্ডনারকে কাট করতে গিয়ে পয়েন্ট ক্যাচ দেন মুর্শিদা, বাংলাদেশ অধিনায়ক এলবিডব্লু হন মলিনিউর লাইন মিস করে। ২৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা স্বাগতিকদের একটু আশা জুগিয়েছিলেন রিতু মনি ও ফাহিমা খাতুন। ওই দুজন ব্যাটিংয়ের সময়ই ইনিংসে ব্যাট থেকে প্রথম বাউন্ডারিটি আসে ২০তম ওভারে, সোফি মলিনিউর বলে মারেন ফাহিমা। তবে তাঁদের ৩৬ বলে ২৫ রানের জুটি প্রবল ধস ঠেকাতে পারেনি কিছুতেই। নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৬০ রানের স্কোরও চোখ রাঙাচ্ছিল তখন।
৯ রানের মধ্যে এরপর পড়েছে ৪ উইকেট। মলিনিউকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে রিতু মনির পর অ্যালানা কিংয়ের বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ফাহিমা। জর্জিয়া ওয়ারেহামের শিকার এরপর স্বর্ণা আক্তার ও রাবেয়া খান। নাহিদা আক্তার, সুলতানা খাতুন ও স্বর্ণা আক্তার অবশ্য এরপর একটু অপেক্ষায় রাখেন অস্ট্রেলিয়াকে। নয়ে নামা নাহিদাই করেন ইনিংস-সর্বোচ্চ ২২ রান। শেষ ২ উইকেটে আসে ৩৬ রান। ৪৪.১ ওভারেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে দশম বার ১০০-এর নিচে অলআউট হলো বাংলাদেশ।