অগ্রসর রিপোর্ট : দ্বাদশ বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে আগামীকাল আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। নিজেদের লক্ষ্য পূরণের আশা বাঁচিয়ে রাখতে এ ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না টাইগাররা। সেমিতে খেলতে এবারের আসরের বাকী তিন ম্যাচেই জয় পেতে হবে বাংলাদেশকে। তিন ম্যাচে জয় পেলে, পয়েন্ট টেবিলের হিসাব-নিকাশ নিশ্চিত করবে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা। তাই টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত জয়হীন থাকা আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে চলমান বিশ্বকাপে নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখতে চায় বাংলাদেশ। সাউদাম্পটনের রোজ বোলে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে খেলাটি।
জয় দিয়ে এবারের বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই পথ হারায় তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের পর নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের কাছে ম্যাচ হারে টাইগাররা। বৃস্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্টে বেশি নিতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই টানা তিন ম্যাচ জিততে না পারা ক্ষত নিয়ে টনটনে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচ খেলতে যায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আবারো জয় তুলে নিতে মাঠে নামে বাংলাদেশ।
কিন্তু প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের সামনে ৩২২ রনের বিশাল টার্গেট ছুড়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের এই চ্যালেঞ্জিং টার্গেট ইতিবাচকভাবেই গ্রহন করে বাংলাদেশ। কারন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে রান চেজ করে ম্যাচ জয়ের বেশক’টি রেকর্ড ছিলো টাইগারদের। ফলে ৩২২ রানের টার্গেট স্পর্শ করার আত্মবিশ্বাস ছিলো বাংলাদেশের। সেই প্রমানও পাওয়া যায় মাঠে।
সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের অসাধারন জুটিতে ৫১ বল বাকী রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। সাকিব ১২৪ ও লিটন ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ফলে ৭ উইকেটে জয় নিয়ে আবারো সেমির পথ খুঁেজ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু পরের ম্যাচে নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপরও ব্যাটসম্যানদের লড়াই করার মানসিকতা বাহ্বা কুড়িয়ে বিশ্ব মঞ্চে।
৫ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮১ রান বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জই ছিলো। এত বড় রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখেনি। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়ার দল এখন আর নয় বাংলাদেশ। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা তৈরি হয়ে গেছে টাইগারদের। তাই পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রানে সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেটে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ১০২, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৬৯ ও তামিম ইকবালের ৬২ রান চোখে পড়ার মত ছিলো। ফর্ম খুজতে থাকা তামিমের হাফ-সেঞ্চুরির স্বস্তি নিঃশ্বাস ছিলো বাংলাদেশ শিবিরে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ম্যাচ হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার পথ অনেকাংশে কঠিন হয়ে পড়ে। কারন পয়েন্ট টেবিলের হিসাব-নিকাশ ছিলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। কিন্তু বাংলাদেশের ম্যাচের পর দিন স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের হিসাব নিকাশ পাল্টে দেয় শ্রীলংকা। এতে আবারো বাংলাদেশের ভালো সুযোগ তৈরি হয়। তবে নিজেদের শেষ তিন ম্যাচে জিততে হবে বাংলাদেশকে। এজন্য ইংল্যান্ডকে শেষ তিন ম্যাচে হারতে হবে, সেই সাথে শ্রীলংকার হারও কামনা করতে হবে টাইগারদের। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ তিন দল- নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-ভারত সেমির দ্বারপ্রান্তেই আছে। কারন নিউজিল্যান্ড ৬ খেলায় ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে। সমানসংখ্যক ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে অস্ট্রেলিয়া। ৫ খেলায় ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে ভারত।
আজ অবধি নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-ভারতের পর সেমিফাইনালের টিকিটের জন্য দৌঁড়ে আছে ইংল্যান্ড-শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ। লিগ পর্বে ইংল্যান্ড-শ্রীলংকা নিজেদের বাকী ম্যাচগুলো হারলেও বাংলাদেশের তিনটি ম্যাচ জিততেই হবে। দু’টি জিতলেও চলবে, সেক্ষেত্রে আবার অনেক হিসাব-নিকাশের মধ্যে পড়তে হবে বাংলাদেশকে।
তবে ভবিষ্যতের হিসাব-নিকাশ মিলাতে হলে কাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেতেই হবে বাংলাদেশকে। কাজটা যে সহজ নয়, তা কিন্তু ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে আফগানিস্তান। এখন অবধি নিজেদের ৬ ম্যাচ খেলে কোন জয় পায়নি তারা। কিন্তু গতকাল ভারতের বিপক্ষে যেভাবে জ্বলে উঠেছিলো আফগানরা, তাতে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া করে নবী-রশিদরা।
ভারতকে ২২৪ রানে মধ্যে আটকে রাখতে সক্ষম হয় আফগানিস্তানের বোলাররা। পরবর্তীতে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২১৩ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা। এতে ২০ রানে ম্যাচ জিতে ভারত। এ ম্যাচে হ্যাট্টিক করেন ভারতের মোহাম্মদ সামি। বিশ্বকাপের দশম হ্যাট্টিক ছিলো।
শুধুমাত্র গতকালের ম্যাচই নয়, বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তান সবসময়ই লড়াই করার জন্য মুখিয়ে থাকে। আগের ৭ দেখায় সেটি প্রমান মিলেছে। তবে জয়ের ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে বাংলাদেশই। আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৪ জয় বাংলাদেশের। ৩ জয় আফগানিস্তানের। এবারের আসরে টানা ছয় ম্যাচ হেরে জয়ের জন্য মুখিয়ে আছে আফগানিস্তান। তাই সহজেই বাংলাদেশকে যে ছেড়ে দিবে না আফগানিস্তান, সেটি অনুমেয়। অপরদিকে, সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবারও অবকাশ নেই বাংলাদেশের।
ব্যাটিং অর্ডারে তুখোড় ফর্মে আছেন সাকিব আল হাসান। ৫ ম্যাচে ২টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪২৫ রান করেছেন সাকিব। বিশ্বকাপে রান সংগ্রহের তালিকায় বর্তমানে দ্বিতীয়স্থানে রয়েছেন তিনি। ফর্মে আছেন মুশফিকুর রহিমও। ১টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে তার। ৫ ম্যাচে রান করেছেন ২৪৪। আগের ম্যাচে তামিম-মাহমুদুল্লাহর রানে ফেরা, ভালো ইঙ্গিত। তবে ভালো শুরু করেও, এখন পর্যন্ত বড় ইনিংস পাননি ওপেনার সৌম্য সরকার। মিডল-অর্ডারে প্রথম তিন ম্যাচে মোহাম্মদ মিথুন ব্যর্থ হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পান লিটন দাস। সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চেনান তিনি। তাই ব্যাটসম্যানরা একসাথে জ্বলে উঠতে পারলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেতে সমস্যা হবে না বাংলাদেশের।
বোলিং-এ বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতি হলো মিডিয়াম পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ইনজুরিতে পড়া। গেল ম্যাচে ইনজুরির কারনে খেলতে পারেননি তিনি। ৪ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে এবারের আসরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী সাইফউদ্দিন। মুস্তাফিজও ভালো করছেন। ৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তবে বল হাতে এখনো জ্বলে উঠতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৫ ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো, যদি না মাশরাফির বলে ক্যাচ না ফেলতেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তারপরও বোলার হিসেবে রান খরচায় বেশ হিসেবী ছিলেন তিনি। সেই সাথে মাঠে মাশরাফির বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব বাংলাদেশের জয়ের প্রধান শক্তি হবে।
বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক হোসেন, আবু জায়েদ রাহি, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান।
আফগানিস্তান দল : গুলবাদিন নাইব (অধিনায়ক), আফতাব আলম, আসগর আফগান, দাওলাত জাদরান, হামিদ হাসান, হাসমতউল্লাহ শাহিদি, হযরতুল্লাহ জাজাই, ইকরাম আলিখিল, মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রহমান, নাজিবুল্লাহ জাদরান, নুর আলি জাদরান, রহমত শাহ, রশিদ খান ও সামিউল্লাহ সিনওয়ারি।