অগ্রসর রিপোর্ট :চলতি বছরের সাত মাস ২১ দিনে দেশে ৭ হাজার ৭৫০ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহেই শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৮২৩ জন। অর্থাৎ এই এক সপ্তাহেই ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩ শতাংশের বেশি। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের।
দেশে যেভাবে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলছে তা আশঙ্কাজনক বলছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ে প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্বেগের উল্টো সুর ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষের। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের দাবি, ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য জনসচেনতনার অভাবকে দায়ী করেছেন দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস।
শনিবার এক অনুষ্ঠানে উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত মোতাবেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নগরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সামাজিক আন্দোলনের সুফল হিসেবেই রাজধানীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় ডিএনসিসি এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম।
এদিকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে দুই সিটির পক্ষ থেকে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। করোনার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন গত ২৪ঘণ্টার ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সংস্থাটির দেয়া তথ্যমতে, এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিন জন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন। কিন্তু করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে যখন দেশের মানুষ দিশেহারা তখন জুলাই ও আগস্টে উদ্বেগজনকভাবে শনাক্ত হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৫০ জন। যেখানে গতবছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন এক হাজার ৪০৫ জন।
এক সপ্তাহে কোনদিন কত আক্রান্ত
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, গতকাল শনিবার দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৭৮ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই রাজধানীর বাসিন্দা। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ২৫৭ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ জন।
২০ আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ২২১ জন, ১৯ আগস্ট ২৭০ জন, ১৮ আগস্ট ৩০৬ জন, ১৭ আগস্ট রোগী ভর্তি হন ৩২৯ জন, ১৬ আগস্ট ২২১ জন ও ১৫ আগস্ট ১৯৮ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ঢাকায় বসবাসকারী।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও।
এদিকে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তুলনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বুধবার করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে এই বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ছয় হাজার ৪৫০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে সর্বমোট ২৬টি মৃত্যুর সংখ্যা আমরা রেকর্ড করেছি। আমরা যদি রোগীর সংখ্যার দিকে তাকাই তাহলে এই ৬ হাজার ৪৫০ জন রোগীর বিপরীতে এতো মানুষের মৃত্যু, এটি অত্যন্ত শঙ্কার কারণ।
২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। ওই বছর দেশে এক লাখের বেশি ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছিল। সেই সময়কার ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ২০১৯ সালে আমরা দেখেছি যে একটি ডেঙ্গু মহামারি আমাদের কীভাবে আক্রান্ত করেছিল। ২০২১ সালে এসেও একই রকম একটি পরিস্থিতির মুখে আমরা দাঁড়িয়েছি।
এসময় জ্বর এলেই ডেঙ্গু পরীক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কারো শরীরে জ্বর এলেই কেবল করোনা মনে করতে হবে তা নয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে হবে।