অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জোরালো ভূমিকা পালন করতে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপানের মতো দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল গণভবনে সফররত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
গণভবনে ইউএনএসসি’র প্রতিনিধি দলের সাক্ষাত শেষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপানের মতো দেশগুলো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি।’
প্রেস সচিব আরো বলেন, ইউএনএসসি’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো অ্যাডোলফো মেজা কুয়াদ্রা বেলাসকেজ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ১৫ সদস্যের ইউএনএসসি’র প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যে ঢাকা ও নাইপিদোর মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমারের কাজ করা উচিত।’
এছাড়া শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর প্রবল চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সংঘাত চাই না, এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংকট সমাধানে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর এবং মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছি।’
সংকট সমাধানে তাঁর সরকারের উদ্যোগের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ইউএনএসসি প্রতিনিধি দলকে বলেন, এ সমস্যা সমাধানে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি অস্বীকার করছে না, তবে তারা এ চুক্তি বাস্তবায়নে নিষ্ক্রিয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও লাওসসহ সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছে।
শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ দমনে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক। আমাদের আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খুবই সক্রিয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য ভাষান চর নামের একটি দ্বীপের উন্নয়ন চলছে। এ দ্বীপে কমপক্ষে ১ লাখ মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা হবে।
তিনি বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন ও তাদেরকে পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আগমনে স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েছে এবং এতে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেল্লি কিউররি বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ভূষসী প্রশংসা করেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে কাজ করে একটি নতুন আন্তর্জাতিক মানদন্ড সৃষ্টির মাধ্যমে আপনি (শেখ হাসিনা) আমাদের সবার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
রাশিয়ার প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়েন্সকি রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশকে মস্কোর সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থনের কথা স্মরণ করে বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।
চীনের প্রতিনিধি বলেন, বেইজিং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্য ও ১০ অস্থায়ী সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই টিম কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের জন্য শনিবার বাংলাদেশে আসেন।
এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন- নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি।
অপর ১০ সদস্য দেশের মধ্যে রয়েছেন- বলিভিয়া, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, ইথিওপিয়া, কাজাখস্তান, নেদারল্যান্ড, পেরু, পোলান্ড ও সুইডেনের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং আইভরি কোস্টের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি।
গত বছর আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞে কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।