স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) মান বজায় রাখা এবং বৈশ্বিক দৃশ্যপট পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে তাদের পাঠ্যক্রম নিয়মিতভাবে যুগোপযোগী করার জন্য কলেজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এনডিসি কোর্স সম্পন্ন করা কর্মকর্তারা তাদের জ্ঞান, দৃঢ়তা ও অঙ্গীকার দিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জাতীয় প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেবেন।
আজ মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে অনুষ্ঠিত এক বছরের ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি)-২০১৫ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি)-২০১৫’র গ্র্যাজুয়েশন প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
নতুন ডিগ্রি অর্জনকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এনডিসি কোর্স ডিগ্রিধারীরা যেকোন বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আরো সক্ষমতা অর্জন করবেন।
বর্তমানে আমরা একটি সার্বজনীন ও বহুকেন্দ্রিক বিশ্বে বসবাস করছি একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি পারস্পরিক সংযোগকে সুদৃঢ় করছে, উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের পথ দেখাচ্ছে আবার মাঝে মধ্যে প্রতিকূল পরিবেশও তৈরি করছে। বিশেষ করে মানবতা বিপন্ন করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মাথাচারা দিয়ে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নতুন গ্রাজুয়েট যারা পরে বিভিন্ন পদে যোগ দেবেন তারা দেশের সেবা প্রদানে সক্ষম হবেন এবং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা আরো জোরদার হবে।
সফলভাবে কোর্স সম্পন্ন করতে তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য গ্রাজুয়েট সদস্য, ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং কলেজের স্টাফ অফিসারদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সরওয়ার্দী।
এ বছর আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ ও ফরেন সার্ভিসের দেশী ও বিদেশী মোট ৭৫ জন ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স সম্পন্ন করেছেন, এদের মধ্যে আর্মি, নেভি ও এয়ারফোর্সের ৩৭ কর্মকর্তা আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
মন্ত্রীবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্য, বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূত, তিন বাহিনী প্রধান, গ্রাজুয়েটদের স্ত্রীগণ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ গ্রাজুয়েট প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০১৫ অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ দেশ ও বিদেশের সামরিক ও বেসামরিক কর্মক্ষেত্রের অপারেশনাল ও কৌশলগত পর্যায়ের নেতৃত্বকে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রেক্ষিতে আরো শানিত করবেন। কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ অবস্থানে উচ্চতর দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,এই কোর্স চলাকালে শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যা এবং এসব সমস্যার সমাধান সম্পর্কে পড়াশুনার পাশাপাশি রাজনৈতিক-সামাজিক-সংস্কৃতি, অর্থনীতি-আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়সহ একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের আগে, দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র ও মধ্যম পর্যায়ের অফিসারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের মেয়াদে এনডিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে এনডিসি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুনাম অর্জনকারী সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত, ধর্মনিরপেকষ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান সরকার দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও শাসন ব্যবস্থায় এসব নীতি নিশ্চিত করতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন,বাংলাদেশের দেশপ্রেমী সশস্ত্র বাহিনী মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধক্ষেত্রে জন্ম লাভ করেছে। এই বাহিনী জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে সব সময় তাদের পাশে দাঁড়াবে। তারা প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগকালে, অবকাঠামো উন্নয়নে এবং বৈশ্বিক শান্তি স্থাপনে জনগণকে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে সততা, অঙ্গীকার ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী দিনগুলোতে জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে অংশীদারিত্ব আরো জোরদার হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান বৈশ্বিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী হয়ে ওঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি অধিকতর পরস্পর নির্ভরশীল বিশ্বে বসবাস করছি। যেখানে উন্নত দেশগুলোর অনেক নীতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর প্রভাব রাখছে এবং এমন নীতির কারণে তাদের অনেক নাজুক অবস্থা মোকাবেলা করতে হচ্ছে, তাই, এসব দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনয়ন ও জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।
আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে তাঁর সরকারের প্রয়াসের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি খুশী হয়েছেন হয়েছেন যে বিগত সাত বছরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল নিরাপত্তা ইস্যু, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশী গ্রাজুয়েটদের পেশাজীবনে সাফল্য কামনা এবং আশা প্রকাশ করেন যে তারা তাদের দেশে বাংলাদেশের দূত হিসেবে কাজ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সামর্থ গড়ে তোলার জন্য খুবই আগ্রহী। কলেজের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য ১৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার বেসামরিক-সামরিক সম্পর্কের সুযোগ আরো সম্প্রসারণ এবং কলেজের লক্ষ্য অর্জনে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের বেসামরিক অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি করার পরামর্শ দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী চমৎকার পেশাজীবী মান প্রদর্শনের জন্য এনডিসি’র কমান্ডেন্ট, অনুষদ, সদস্যবৃন্দ ও কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি ভবিষ্যতেও সব সময় তারা সরকারের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।