অগ্রসর রিপোর্ট : রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহত ৩৯ জনকে সনাক্ত করা গেলেও আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ৩৫টি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাত পৌণে ১১টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় একটি ভবনে আগুন লাগে। ওই ভবনের দোতলায় রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম থাকায় ভবনটিতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অগিকান্ডে দগ্ধ হয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৬৮ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়। সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত এই ঘটনায় আহত ৪১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে ১৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান বলেন, ‘আগুন ওই এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারসহ আরো তিনটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। দমকল বাহিনীর ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট প্রায় সোয়া ৪ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত তিনটির দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।’ তবে তিনি অগ্নিকা-ের কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেননি।
রাজধানীর অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইনটেইনেন্স) দিলিপ ঘোষ, সহকারি পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ ও উপ-সহকারি পরিচালক আবদুল হালিম।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১২ সদস্য বিশিষ্ট অপর কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত সচিব মো: মফিজুল হককে। এই কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে অগ্নিকান্ডে প্রাণহানির ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি’র কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, সরকার অগ্নিকান্ডে আহতদের চিকিৎসার খরচ বহন করবে।
ঢাকায় চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকরা দগ্ধদের আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দিচ্ছেন। বর্তমানে যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের অনেকের অবস্থা ভাল নয়। আমরা চেষ্টা করছি তাদের যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার।’
অপরদিকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান অগ্নিকান্ডে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১লাখ এবং আহতদের প্রত্যেকের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেন। যে ভবনটিতে প্রথমে আগুন লেগেছিল সেটি পাচঁতলা বিশিষ্ট। ভবনটির নাম ‘হাজী ওয়াহেদ মঞ্জিল’। ভবনটির নিচতলায় রয়েছে কেমিক্যাল গোডাউন এবং প্লাস্টিক তৈরির উপকরণের (প্লাস্টিক দানা) চারটি দোকান। ভবনটির পাশের আনাস হোটেল, রাজ হোটেল এবং উল্টা পাশের চারটি বাসায় আগুন ছড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক জানান, বিভিন্ন কেমিক্যাল, বডিস্প্রে ও প্লাস্টিক পণ্যের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। আর সরু রাস্তার কারণে আগুন নেভাতে দমকল কর্মীদের অনেক সমস্যা হয়েছে। অগ্নিকান্ডে ওয়াহিদ মঞ্জিলের ভেতর থেকে অনেক মৃতদেহ পাওয়া গেছে বলেও তিনি জানান।
আগুন পুরোপুরি নেভাতে বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয় হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা কবলিত ভবনের সামনে থাকা দুটি প্রাইভেট কার, দুটি পিকআপ ভ্যান, ছয়টি মটোরসাইকেল ও ৩০টি রিক্সা-ভ্যান আগুনে পুড়ে যায়।