নরসিংদী প্রতিনিধি- নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনা নদীর নির্ধারিত স্থানের বাইরে থেকে আবারো অবাধে বালি উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েকটি গ্রামে ভাঙন বেড়েছে। বসতবাড়িও বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হাটবাজার, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অনেক বিদ্যালয় হুমকির মুখে পড়েছে। ইজারাদার জানান, তারা অনুমোদিত স্থান থেকেই বালি উত্তোলন করছেন। কিন্তু এলাকাবাসী জানান, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালি উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
রায়পুরা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পূর্ব হোসেননগরের ২ নং সিটের ২০১০ দাগের ১৪ হেক্টর এলাকা থেকে বালি উত্তোলন করার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদাগরকান্দি লঞ্চঘাটে পূর্বে পাগলাবাড়ীর ঘাট থেকে দক্ষিণে মরাগাঙ্গী পর্যন্ত সীমানাও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মেসার্স ছালমা এন্টারপ্রাইজ এ বালি মহালের ইজারা নেন। কিন্তু নির্ধারিত সীমানার বাইরে থেকে বালি উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। বালি উত্তোলন বন্ধে এলাকার জনস্বার্থে করা উচ্চ আদালতের রিট পিটিশনের রায় আমলে নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, মেঘনার পূর্ব হোসেননগরের কিছু অংশ ইজারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই নির্ধারিত সীমানার বাইরে চরলাপাং, মোহিনীপুর, মির্জাচর লঞ্চঘাট এবং সদাগরকান্দিসহ কয়েকটি এলাকা থেকে অবাধে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীতে ভাঙন তীব্র হয়েছে। চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁনপুর গোরস্থান, কাইলকাপুরে অনেকের বসতভিটা, সদাগরকান্দি এলাকার হাটবাজার ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি শক্তিশালী ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে নির্দিষ্ট সীমানার প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে লাপাং মৌজা ও হোসেননগর মৌজা থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত বালি স্টিলবডির নৌকা ও কার্গোয় করে নবীনগর, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় নেয়া হচ্ছে। আর এলাকাবাসী নদীর পাড়ে বসতি ও স্থাপনা রক্ষায় বাঁশের বাঁধ তৈরি করেছেন।
চাঁনপুরের আকবর হোসেন ও সবজে আলী জানান, বালি উত্তোলন করায় রায়পুরার মির্জাচর গ্রামটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। অনেকের বসতভিটা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। কিন্তু অবাধে বালি উত্তোলন রোধে কোনো প্রশাসনিক তৎপরতা নেই। মির্জাচর গ্রামের কবির হোসেন জানান, বালি উত্তোলনের প্রতিবাদ করলে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাকে মারধর করা হয়। এমনকি জীবননাশের হুমকিসহ মিথ্যে মামলায়ও ফাঁসানো হয়। ছালমা এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মনির হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৫২ লাখ টাকায় পূর্ব হোসেননগরের এ বালিমহাল সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়া হয়েছে। ইজারার শর্তানুযায়ী নির্ধারিত সীমানা থেকেই বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। মির্জাচর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবার নদীতে ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি। নদীর পশ্চিম স্রোত থেকে বালি উত্তোলন করায় ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে। তিনি আরো জানান, অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ না করা হলে হাটবাজার, লঞ্চঘাট, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
শাহ আলম খন্দকার জানান, অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করেছিলাম। তার ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞ আদালতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ৩ আগস্ট নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা এবং কেন শর্ত ভঙ্গের দায়ে ইজারা চুক্তি বাতিল করা হবে না মর্মে রুল জারি করেন। কিন্তু মেসার্স ছালমা এন্টারপ্রাইজ আদালতের রুল অমান্য করে বালি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। ফলে কয়েকটি গ্রামের হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের মুখে পড়েছে। রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইজারাদারদের নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে থেকে বালি উত্তোলন করতে নিষেধ করা হয়েছে।