অগ্রসর রিপোর্টঃট্রাক, পিকআপ থেকে শুরু করে ট্রেনের ছাদ-বাম্পার-ইঞ্জিন, বাসের ছাদ, লঞ্চের ছাদ সবখানেই মানুষ আর মানুষ। পথের এমন চিত্র বলে দেয় দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। তাই বাড়ি ফেরার তাড়া। যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন প্রিয় জনের কাছে।
বৃহস্পতিবার থেকেই ঈদের ছুটি শুরু। রাতভর ঢাকা থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে গেছেন অনেকেই। ভোর থেকে বাস-লঞ্চ-রেল স্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল নামে। বাস টার্মিনালে পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। তাই বাসের ছাদেও ছিল ঠাঁসা যাত্রী। তবে ছাদের ভাড়া সিটের থেকে কিছুটা কম। পণ্যবাহি পরিবহনের উপরেও গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে বিভিন্ন মহাসড়কে।
সড়কপথে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রাম পথের যাত্রীদের।
শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর তিনটি আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেল স্টেশনে মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। এবার ঈদের সরকারী ছুটি ২৫ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত। তার আগে দুদিন শুক্র আর শনিবার থাকায় কার্যত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুতে যানজট দেখা গেলেও শুক্রবার ভোরে কমে এসেছিল। কিন্তু সকালে সেতুতে একটি ট্রাক বিকল হওয়ায় ফের লেগেছে জট। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ শরীফুল হাসান। মাওয়া মহাসড়কেও তেমন যানজট নেই বলে সায়েদাবাদ থেকে বরিশাল-খুলনা অঞ্চলগামী বাসগুলোর কাউন্টারকর্মীরা জানিয়েছেন। উত্তরের পথে টাঙ্গাইলে মহাসড়কে গাড়িগুলোর গতি ধীর হওয়া ছাড়া আর তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। একইচিত্র মহাখালী থেকে ময়মনসিংহগামী বাসের ক্ষেত্রেও।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিভিন্ন রুটের যানবাহনের ভিড় থাকলেও সকালে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় তেমন যানজট দেখা যায়নি। মহাসড়কে ট্রাক, কভার্ড ভ্যান বন্ধ রাখার সরকারী সিদ্ধান্ত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সকালে ঢাকা বাইপাস সড়কে প্রচুর ট্রাক-কভার্ড ভ্যান চলতে দেখা গেছে।শুক্রবার বিকেল থেকে রাজধানী কিছুটা ফাঁকা হতে শুরু করে। গত কয়েকদিন যে পরিমান যানজটের ভোগান্তি হয়েছে তাও এসেছে সহনীয় পর্যায়ে। তবে মার্কেট ও বিপনী বিতানগুলো কেন্দ্র করে কিছুটা জটলা রয়েছে।
টার্মিনালগুলো থেকে বেশিরভাগ বাস ঠিক সময়ে ছেড়েছে। তবে গাবতলীর বাস কাউন্টারগুলো থেকে অগ্রিম টিকেট দেয়া হয়েছিল। কিছু বাস সড়কে যানজটের কারণে পৌছাতে বিলম্ব হয়। ছাড়েও কিছুটা দেড়িতে। সড়কে যানজটের আশঙ্কা নিয়েই রওনা হয়েছেন যাত্রীরা। গাবতলীর কয়েকজন কাউন্টার ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সকাল ৯টা পর্যন্ত তারা নির্ধারিত সময়ে বাসগুলো ছাড়তে পেরেছেন। তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলে ধীরগতির কারণে পরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসআর ট্রাভেলেসের এজিএম টি আর প্লাবন বলেন, আমাদের হাতে গাড়ি ছিল, সেগুলো সকাল ৯টা পর্যন্ত ঠিক সময়ে ছাড়তে পেরেছি। কিন্তু যানজটের কারণে গতকাল বিকালের দিকে যাওয়া গাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে। এরপর থেকে লেট হবে।’তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যমুনা ব্রিজ থেকে এদিকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত যানজট রয়েছে। রাস্তার যে যানজট সেটাকে স্বাভাবিক ভাবেই দেখছেন শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সেলিম শিকদার। উত্তরবঙ্গমুখী বাসের এই কাউন্টার ব্যবস্থাপক বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট যেটা আছে সেটা স্বাভাবিকই বলতে হবে। কালকের যাওয়া গাড়িগুলো অনেকটা ঠিক সময়ে ফিরে আসছে। রাস্তায় যে পরিস্থিতি আছে সেটা অন্যান্য সময়ের মতোই। রাস্তা একেবারে ক্লিয়ার না থাকলেও গাড়ি ভালোভাবে ফিরে আসছে। এটা বজায় থাকলে ঠিক সময়ে গাড়ি ছেড়ে যেতে পারবে। মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের বাস চালকরা জানিয়েছেন, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত যেতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। টাঙ্গাইল থেকে চন্দ্রা, কালিয়াকৈড়, আশুলিয়া সহ ৭টি পয়েন্টে যানবাহনের জটলা হচ্ছে।
বিকেলে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া ঘাটে দীর্ঘ জট ছিল। আরিচা সড়কে ছিল যানবাহনের ধীরগতি।