কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় মোরার রেশ কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে ভাঙা বেড়িবাধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফের ৩৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার শহরের নিম্নঞ্চলের ৫টি গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। ফলে প্লাবিত এলাকার অর্ধ-লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী নিম্নচাপের কারণে কক্সবাজারে রোববার রাত থেকেই শুরু হওয়া ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
আর নিম্নচাপেরপ্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট উচ্চতায়প্রবাহিত হয়ে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, ফদনার ডেইল, চরপাড়া ও কুতুবদিয়াপাড়া। ফলে প্লাবিত এলাকার মানুষগুলো পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। আর ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও এই নিম্নচাপের খবরে আতঙ্কও বিরাজ করছে তাদের মাঝে।
শহরের নাজিরারটেক এলাকা সুলতান আহমদ জানান, জোয়ারের পানিতে পুরো ঘরে পানি। পানির কারণে রান্না করতে না পারায় অপোষ রোজা রাখতে হয়েছে। সমিতি পাড়া রিয়াজ উদ্দিন ও রহিমা বেগম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ঘর ভেঙ্গে গিয়েছিল। তারপর সুদে টাকা নিয়ে কোন রকম ঘর আবার নির্মাণ করেছি। কিন্তু রোববার রাতে ঝড়ো বাতাসে ঘরের ছাউনী উড়ে গেছে। এখন খুবই কষ্টে আছি।
ফদনারডেইল এলাকার কুলসুমা খাতুন জানান, পানির কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। এখন পানি একটু কমার পর কোন রকম নৌকায় যাতায়াত করে বাজার করতে যেতে হচ্ছে। এছাড়াও ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানিপ্রবেশ করে পেকুয়ার ৫ গ্রাম, মহেশখালীর ১৫ গ্রাম, কুতুবদিয়ার ১০ গ্রাম ও টেকনাফের ৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কুতুবদিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক লিটন কুতুবী জানান কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল, উত্তর ধুরুং, বড়ঘোপ এলাকায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ওইসব এলাকা থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।
মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহ্সান উল্লাহ বাচ্চু জানান, ধলঘাটা ইউনিয়নের উপকূলের মানুষগুলোর দূর্ভোগের শেষ নেই। জোয়ারের পানিতে ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। আর ওইসব এলাকা থেকে নৌকা ও ট্রলার দিয়ে মানুষদেরকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল জানান, জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার শহরের পাঁচটি গ্রামেরপ্রায় ১০হাজার মানুষ দূর্ভোগে রয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাত যেতে না যেতে নিম্নচাপের কারণে মানুষগুলো চরম দুর্যোগে পড়েছেন। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী নিম্নচাপটি সকাল ৬টায় স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
রবিবার রাতে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেলেও সোমবার সকালে তা ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে। নিম্নচাপটি ধীরে ধিরে মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে এখনো সাগর উত্তার রয়েছে এবং ৩নং সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।