নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এখন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন।
কিন্তু সাবেক কমিশনার, পর্যবেক্ষক এবং আইন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখনই সুযোগ একটি আইন তৈরি করে স্বাধীন কমিশন গঠন করার।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে সুনির্দিষ্টভাবে আইনের কথা বলা আছে যে, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ করবেন।
স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের গুরুত্বপূর্ণ এ আইনটি এতদিনেও কেন হয়নি এ প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, “সরকার এসব নিয়োগের ওপর নিয়ন্ত্রণটা ছাড়তে চায়না। আইন হলে সরকারের নিয়ন্ত্রণটা চলে যাবে। খেয়াল-খুশি মতো দিতে পারবে না এই জন্যই কোনও সরকার এসব আইন করতে চায় না।”
“আইনে বাছাই কমিটির কথা বলা থাকে যে কারা বাছাই কমিটিতে থাকবে, নূন্যতম যোগ্যতা কী হবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের জন্য, আর কী পদ্ধতিতে এই সিলেকশন হবে সেটাও বলা থাকে। আইনে এইগুলো বেঁধে দিলে তাহলে কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা, ইচ্ছামতো বা খেয়াল-খুশিমতো করার কোনো সুযোগ থাকে না।”
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন না থাকায় অতীতে আস্থাহীনতা আর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক ড. আব্দুল আলীম বলেন, “কেয়ারটেকার সরকারের সময় যে নির্বাচন কমিশনগুলো হয়েছে সেটা মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য; এগুলো নিয়ে ঐরকম কোনও বিতর্ক নাই।”
”কিন্তু আমাদের যে রাজনৈতিক সরকারের সময় এই যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি সবাইতো ক্ষমতায় ছিল; তাদের আমলে যে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ পেয়েছিল তাদের প্রত্যেককে নিয়ে কমবেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।”
মি. আলীম বলেন, “আইন না থাকার জন্য প্রথম যেটা হয় সেটা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ার ওপর মানুষের আস্থা থাকে না। এবং এর যে প্রভাবটা সেটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর চলে যায়।”
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কাগজে কলমে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী কিন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করার যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
“ইলেকশন কমিশনের গঠনটাই হচ্ছে সবচাইতে বড়। যেটাকে আমরা বলবো যে ফার্স্ট স্টেপ টু ইন্ডিপেন্ডেস। আবার ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইলেকশন কমিশন আছে কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট মাইন্ডের লোকদেরকে আপনার সেখানে দিতে হবে।”
”সেখানে কারা যাবে সেটা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ যাতে না হয় বা প্রতিদিন এটা নিয়ে যাতে বিতর্ক সৃষ্টি না হয় সেই কারণে আইনটা খুব প্রয়োজন যেটা আমাদের সংবিধানে বলা আছে।”
জানা যায় সংবিধানের আলোকে আগের কমিশন আইনের একটি খসড়া সরকারের কাছে দিলেও সরকার সেটি আমলে নেয়নি।
কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্যই ২০১৪ সালে একতরফা জাতীয় নির্বাচন হয়।
ওই নির্বাচন বয়কট করা তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে দলটি যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেছে সেখানেও আইনের বিষয়টি অনুপস্থিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কমিশন গঠন হতে পারে কিন্তু আইন প্রণয়ন ছাড়া একটি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে যাচ্ছে তা নিয়ে আবারো বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ থেকে যায়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা