অগ্রসর রির্পোট : বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ও ব্যয়বহুল নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। সারা বিশ্ব উন্মুখ হয়ে আছে এ নির্বাচনের দিকে। আর সারা বিশ্বের তাবৎ মিডিয়া অপেক্ষায় আছে এ নির্বাচন কাভার করতে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিন মুল্লুক কার্যত দু’ভাগ হয়ে গেছে। বিশ্বের অনেক দেশের ভাগ্য নির্ভর করছে এ নির্বাচনের ওপর। বিশ্বের অনেক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের মতো করে এ নির্বাচনে সমর্থন জানিয়েছে। উত্তেজনায় কাঁপছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। কী হবে শেষ পর্যন্ত?
বিশ্বের ব্যয়বহুল এ নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের জরিপে দু’প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। হোয়াইট হাউসে প্রবেশের জন্য এখন চলছে শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনই আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট মুঘল ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের এমন নজির মার্কিন নির্বাচনে এই প্রথম।
নির্বাচিত হলে হিলারি ক্লিনটন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জনগণের সঙ্গে আছেন হিলারি ক্লিনটন। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গেও তার সম্পর্ক বেশ পুরনো। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে জীবনের এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। হিলারির এ প্রতিদ্বন্ধী ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৮ মাসেরও কম সময় আগে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন।
প্রাইমারিতে এই কম সময়ের অভিজ্ঞতায় ৭০ বছরের ট্রাম্প ১৭ প্রার্থীকে পরাজিত করে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মধ্যে বিস্ময় তৈরি করেছেন। ভুলের প্রান্তসীমায় পৌঁছেও এখন তিনি হিলারির কাছে সামান্য পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে আছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি প্রচারাভিযানকে তিনি বিচলিত করে তুলেছেন। হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবির বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যারিশম্যাটিক বারাক ওবামার সমর্থন পাচ্ছে। গত কিছু দিন ধরে তিনি হিলারির জন্য ভোট চাইছেন। ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া, ওহাইও এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে হাজার হাজার মানুষ ঘণ্টাব্যাপী ওবামার বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করেছেন। এসব সমাবেশে ওবামা হিলারির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বারাক ওবামা বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে যোগ্যপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। নিজের মন্ত্রিসভার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারিকে ভোট দিতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান ওবামা। একই সঙ্গে ট্রাম্প ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হোয়াইট হাউসে তার উত্তরসূরি হিসেবে ট্রাম্প উপযুক্ত নন। এদিকে সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দেয়া হয়েছে। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল/এনবিসি নিউজের জনমত জরিপে চার পয়েন্ট এগিয়ে আছেন হিলারি ক্লিনটন। এতে ৪৪ শতাংশ মানুষ হিলারির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। আর ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৪০ শতাংশ মানুষ। ছয় শতাংশ সমর্থন দিয়েছেন লিবার্টারিয়ান পার্টির প্রার্থী গ্যারি জনসনকে। দুই শতাংশের সমর্থন পেয়েছেন গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন। পলিটিকো/মর্নিং কনসাল্টের জনমত জরিপে হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে রয়েছেন তিন পয়েন্টে। এতে হিলারিকে সমর্থন দিয়েছেন ৪৫ শতাংশ। আর ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন ৪২ শতাংশ। রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্সের গড় জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ পিছিয়ে আছেন। বিভিন্ন প্রতিবেদনে অনেক রাজ্যে অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। ফলে দুই প্রার্থীকেই শেষ সময় পর্যন্ত বাড়তি প্রচারণা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। গত দুই দিনে গড়ে ছয়টি করে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটদের থামাতে ঐতিহ্যগতভাবে তাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মিনেসোটা ও কলোরাডোতেও তিনি ভাষণ দিয়েছেন। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবিরের নেতারা মিশিগান ও অ্যারিজোনায় প্রচার চালিয়েছেন। সাম্প্রতিক জরিপে মিনেসোটায় ট্রাম্পের উত্থানের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আর অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার রাতে ফিলাডেলফিয়ায় ওবামার সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন হিলারি ক্লিনটন। মধ্যরাতে নর্থ ক্যারোলিনার রাজধানী রালেগ-এ আয়োজিত র্যালিতে তাকে সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যাবে। একই সময়ে মিশিগানে অনুষ্ঠিত হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শেষ র?্যালি।
হিলারির ‘কেলেঙ্কারির অবসানে’ চাঙ্গা ডেমোক্র্যাট শিবির, ক্ষুব্ধ ট্রাম্প
গতকাল সোমবার পর্যন্তও হিলারি-সংশ্লিষ্ট মেইল পুনঃতদন্তে নেয়া এফবিআইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছিল জল্পনা-কল্পনা। রিপাবলিকানপন্থী কিছু মিডিয়া আর বুদ্ধিজীবী বলতে চেয়েছিলেন, ফেঁসে যেতে পারেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। পড়তে পারেন মামলার কবলে। তবে রোববার হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে নতুন তদন্তের নাটকীয় সমাপ্তি টেনেছে এফবিআই। নির্বাচনের ১১ দিন আগে পুনঃতদন্ত শুরুর ঘোষণার সময় স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়ার কথা জানালেও এদিন এফবিআই প্রধান জেমস কোমি জানিয়েছেন, নতুন তদন্তে হিলারির বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই জুলাইয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখছেন তারা। শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী জরিপগুলোতে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প আর হিলারির হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে, তখন এফবিআইয়ের অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াটা হিলারির জন্য বড় ধরনের স্বস্তি বলে মনে করা হচ্ছে। খবরটি তাৎক্ষণিকভাবে ডেমোক্র্যাট শিবিরে উল্লাস বয়ে এনেছে। বিপরীতে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প শিবির। এফবিআই আট দিনে কীভাবে সাড়ে ছয় লাখ ই-মেইল পর্যালোচনা করতে সমর্থ হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প। অবশ্য জেমস কোমি বলছেন, হুমা আবেদিনের স্বামী অ্যান্থনির ল্যাপটপে হিলারির পুরো সাড়ে ছয় লাখ ই-মেইলের সবগুলোকে তারা তদন্তের আওতায় আনেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে কেবল হিলারির আদান-প্রদানকৃত মেইলগুলোকে তদন্তের আওতায় নিয়েছেন তারা। আজ ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে এফবিআই প্রধান ঘোষণা দেন, হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তার কাছে আসা এবং তার পাঠানো সব ই-মেইল আমরা তদন্ত করেছি। গত জুলাইয়ে হিলারি ক্লিনটনের বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত আমরা পরিবর্তন করছি না। এফবিআইয়ের সিদ্ধান্তে এখন ডেমোক্র্যাট শিবির চাঙ্গা। রোববার এফবিআইয়ের নিষ্কৃতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবির। হিলারির প্রচারণা শিবিরের যোগাযোগ পরিচালক জেনিফার পালমিয়েরি বলেন, তদন্তে তিনি যা পেয়েছেন, তাতে আমরা আনন্দিত। আমরা এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, তিনি তদন্ত করে এটাই পাবেন। আমরা আনন্দিত যে, এ বিষয়ের একটা সমাধান হয়েছে। বিপরীতে কেলেঙ্কারি থেকে হিলারির নিষ্কৃতির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প শিবির। তাদের দাবি, ব্যাপক রাজনৈতিক চাপের কারণে এফবিআই প্রধান এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। রোববার মিশিগানে এক নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আট দিনে সাড়ে ছয় লাখ ই-মেইল আপনারা পর্যালোচনা করতে পারেন না। আপনারা এটা করতে পারেন না। হিলারি ক্লিনটন দোষী। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প এফবিআইয়ের পুনঃতদন্তের আওতায় হিলারির যত সংখ্যক ই-মেইল থাকার কথা উচ্চারণ করেছেন তা ভুল। কেননা, এফবিআই প্রধান জেমস কোমি জানিয়েছিলেন, হুমা আবেদিনের স্বামী অ্যান্থনির ল্যাপটপে হিলারির পুরো সাড়ে ছয় লাখ ই-মেইল তারা পর্যালোচনা করেননি। পর্যালোচনা করেছেন কেবল হিলারির আদান-প্রদানকৃত মেইলকে।
উল্লেখ্য, হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত সার্ভার থেকে ই-মেইল আদান-প্রদান করেছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে আদান-প্রদান করা ই-মেইলগুলোতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়েরও উল্লেখ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের নিয়ন্ত্রিত চ্যানেল ছাড়া ক্লাসিফায়েড তথ্য আদান-প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ধরনের অনিরাপদ চ্যানেলের মাধ্যমে অতি গোপনীয় ই-মেইল ফাঁস হওয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে মার্কিন সরকার। খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর ঘটনার তদন্তে নামে এফবিআই। গত ২৯ জানুয়ারিতে সংস্থাটির অনুরোধে হিলারির ২২টিরও বেশি ই-মেইলকে ‘অতি গোপনীয়’ বলে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। আর জুলাই মাসে প্রথম ধাপের তদন্ত শেষ করে এফবিআই জানিয়েছিল, হিলারিকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে না। সম্প্রতি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের নতুন করে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়। এর আট দিনের মাথায় জুলাইয়ের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখার ঘোষণা এলো এফবিআইয়ের তরফ থেকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবির এফবিআইয়ের কাছ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাবে। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনবরত হিলারির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যাবেন। হিলারিকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করে যাবেন তিনি। অবশ্য এরই মধ্যে ট্রাম্প বলতেও শুরু করেছেন যে, হিলারিকে বাঁচাতে এফবিআই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে।
ট্রাম্পের আমেরিকায় কি আমার সন্তানের স্থান রয়েছে : প্রশ্ন খিজির খানের
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকায় নিজের সন্তানের স্থান আছে কিনা, জানতে চেয়েছেন ইরাক যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনা হুমায়ূন খানের বাবা খিজির খান। একই সঙ্গে ট্রাম্পের আমেরিকায় কাদের স্থান থাকবে; সেটাও জানতে চেয়েছেন তিনি। রোববার রাতে নিউ হ্যাম্পশায়ারের ম্যানচেস্টারে হিলারি সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে ট্রাম্পের প্রতি এসব প্রশ্ন ছুড়ে দেন খিজির খান। ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে বিজয়ী করতেও তিনি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে খিজির খান বলেন, আপনার কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আপনার আমেরিকায় কি আমার সন্তানের কোনো স্থান রয়েছে? আপনার আমেরিকায় কি মুসলিমদের স্থান রয়েছে? আপনার আমেরিকায় কি ল্যাটিনদের স্থান রয়েছে? আপনার আমেরিকায় কি আফ্রো-আমেরিকানদের স্থান রয়েছে? আপনার আমেরিকায় কি এদের কারোরই স্থান নেই? ভালো! সৌভাগ্যবশত এটা আপনার আমেরিকা নয়। কয়েক মাস আগেও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তার ছেলের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে মুসলিমবিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তুলোধোনা করেন খিজির খান। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘বাজে প্রার্থী’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন খিজির খান। তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটিক কনভেনশনে বক্তব্য এবং তার সূত্র ধরে ট্রাম্পের সমালোচনার শিকার হওয়ার পর সারা দেশ থেকে মানুষ তাকে উৎসাহিত করেছেন। সাধুবাদ জানিয়ে তিনি ও তার স্ত্রীকে ‘উদার আমেরিকার প্রতীক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন অনেকে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে খিজির খান মন্তব্য করেন, ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট হবে ঘৃণার বিপক্ষে ভোট। ৩৬ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী খিজির খানের ভাষায়, আমি জানি, যে মূল্যবোধের জন্য আমি আমেরিকার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই মূল্যবোধের প্রতিনিধি নন। তিনি বলেন, মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি তুলে ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন মার্কিন সৈনিকের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান দেখিয়েছেন।
উল্লেখ্য, জনসংখ্যার বিচারে কম হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাজ্যে ভোটের লড়াইয়ে মুসলিমরা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই বিবেচিত হন। কারণ মার্কিন মুসলিমদের বেশিরভাগেরই বাস মিশিগান, ওহাইও, ভার্জিনিয়া কিংবা ফ্লোরিডার মতো দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে। ফলে মুসলিম ভোট ব্যাংক এসব রাজ্যে নির্বাচনী লড়াইয়ের পার্থক্য গড়তে ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল ইকোনমি বিভাগের অধ্যাপক শারিন হেলোরান। তিনি বলেন, এবারই প্রথম মুসলমানরা একটি গ্রুপ হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে আবির্ভূত হয়েছেন। সূত্র : সিএনএন, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিয়ে ১৩০ মিলিয়ন ডলার বাজি
সম্ভবত ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক আলোচিত, বিতর্কিত ও অনিশ্চিত নির্বাচন। কেননা বিভিন্ন জনমত জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটন আর রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে।
গতকাল যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারনেট জুয়ার পাটাতন বেটফেয়ার জানায়, কে হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তা নিয়ে বাজি ধরা অর্থের পরিমাণ রেকর্ডে পৌঁছেছে। তারা আরও জানায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০ মিলিয়ন ডলারের জুয়া চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন’ তাই নিয়ে। বেটফেয়ারের মুখপাত্র নাওমি টোটেন জানান, এর আগে ব্রেক্সিট নিয়ে জুয়ার অর্থের পরিমাণ ছিল ১৫৯ মিলিয়ন ডলার। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বেটফেয়ার দাবি করেছে, হিলারি ক্লিনটন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারেন। এমনই আরেক পাটাতন প্রেডিক্টইট দাবি করে, হিলারির জেতার সম্ভাবনা ৮১ শতাংশ। উল্লেখ্য, মার্কিন নির্বাচন নিয়ে জুয়া ও বাজি ধরার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, কেননা নির্বাচন নিয়ে জুয়া বিষয়ে আইনি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশটিতে।
নেভাদা ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের হিস্পানিক ভোটে বিপদ সামলাবেন হিলারি
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নেভাদা ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য নিজ দখলে আনতে হবে। এ কথা তিনি খুব ভালো করেই জানেন। সে জন্য নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সপ্তাহে তিনি বারবার এই দুই রাজ্যে ফিরে এসেছেন। কিন্তু আগাম ভোটের হিসাব যদি সঠিক হয়, ট্রাম্প সম্ভবত এই দুই রাজ্যই হারাচ্ছেন, এর সঙ্গে সঙ্গে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন। আর এই হার হয়তো তাকে মানতে হবে হিস্পানিক ভোটারদের কারণে, যাদের তিনি ধর্ষক ও মাদক ব্যবসায়ী বলে নিন্দা করেছিলেন।
একাধিক সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, নেভাদায় হিস্পানিকদের আগাম ভোটের পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ‘পলিটিকো’ জানিয়েছে, এই রাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল ক্লার্ক কাউন্টিতে হিস্পানিকদের কারণে হিলারি কমপক্ষে ৭২ হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন। এই রাজ্যের একজন নির্বাচনী বিশ্লেষক জানিয়েছেন, নেভাদাকে হিলারির খাতায় তুলে দিতে এই সংখ্যা পর্যাপ্ত। ২০১২ সালে ওবামা নেভাদা জিতেছিলেন ৭ পয়েন্টে। সেবার এই কাউন্টিতে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে আগাম ভোট পড়েছিল ৭১ হাজার। একজন ডেমোক্র্যাটিক কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প চেয়েছিলেন, মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল তুলতে। নেভাদায় সেই দেয়াল তিনি পেয়ে গেলেন, তবে এই দেয়াল হিস্পানিক ভোটারদের তোলা দেয়াল।
ফ্লোরিডা থেকেও খবর এসেছে, রোববারে সমাপ্ত আগাম ভোটে সেখানে প্রায় ৬২ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন, যার ১০ লাখ ভোটার হলেন হিস্পানিক। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নির্বাচনী পরিসংখ্যান বিশারদ জানিয়েছেন, তার হিসাব অনুযায়ী এ হিস্পানিক ভোটারদের এক-তৃতীয়াংশই এ বছর প্রথমবারের মতো ভোটে অংশ নিচ্ছেন।
এদিকে রোববার প্রকাশিত এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের গৃহীত সর্বশেষ জাতীয় জনমত জরিপে চার পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন হিলারি। ভাবা হচ্ছে এই ব্যবধান যদি বজায় থাকে, তাহলে ডেমোক্র্যাটরা সম্ভবত সিনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন। সে সম্ভাবনা রুখতে রিপাবলিকান পার্টি প্রচারণার শেষ সপ্তাহে অতিরিক্ত ৩৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই শেষ মুহূর্তে এসে রিপাবলিকান স্পিকার পল রায়ানও নির্বাচনী প্রচারণায় হাত লাগিয়েছেন। রোববার সিএনএনের ওয়েবসাইটে এক সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে তিনি সব রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রদানের আবেদন করেছেন।
মার্কিন মুল্লুকে যেভাবে হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজ মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দেশটির সংবিধানের আর্টিকেল-২ এর দ্বাদশ সংশোধনী অনুযায়ী প্রতি চার বছর অন্তর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথা অনুযায়ী নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরবর্তী মঙ্গলবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীকে অবশ্যই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। এক. প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। দুই. তাকে অন্তত ৩৫ বছর বয়সী হতে হবে। তিন. অন্তত ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে দীর্ঘ এক মাসব্যাপী ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত হন। এ জন্য আইওয়া রাজ্যে রাজনৈতিক নেতাদের সমিতিতে নির্বাচন সম্পর্কিত আলোচনা হয়। সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়। পরবর্তী ধাপে মূল নির্বাচনে ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া (ওয়াশিংটন নগরী) কোনো অঙ্গরাজ্যের অংশ নয়। ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও একজনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্টের জন্য ভোট দেয়ার সময় একই সঙ্গে ইলেক্টোরাল প্রতিনিধির জন্যও ভোট দেন। মূলত ভোটাররা ইলেক্টর নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। কারণ কাগজে-কলমে এ ইলেক্টরদের ভোটেই নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের পপুলার ভোটের মাধ্যমেই ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের নির্ধারণ করা হয়। এরা মনোনীত একজন প্রার্থীকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেন।
ইলেক্টোরাল কলেজ
ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ সদস্য রয়েছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে কোন রাজ্য থেকে কতজন সদস্য হবেন তা নির্ধারিত হয়। বেশিরভাগ রাজ্যেই প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের যতো বেশি ভোটই পান না কেন তাতে কোনো লাভ হয় না। ধরা যাক, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৯৯ শতাংশ ভোটার হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিয়েছেন, তিনি ওই রাজ্যের পুরো ৫৫টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাবেন। যদি তিনি ওই রাজ্যের ৫১ শতাংশ ভোটও পান, তবুও তিনি ৫৫টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাবেন। ইলেক্টোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা হয়ে থাকে দলীয় ভিত্তিতে। ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যিনি ন্যূনতম ২৭০টি পাবেন, তিনিই বেসরকারিভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হবেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তার রানিং মেট আপনাআপনিই নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হবেন।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে একটি রাজ্যের প্রতি সদস্য এবং প্রতিটি রাজ্যের দুজন সিনেটরের জন্য একজন ইলেক্টর রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য হওয়ায় এখানে ৫৫ জন ইলেক্টর রয়েছে। অন্য রাজ্যগুলোর মধ্যে টেক্সাসে ৩৮ জন ইলেক্টর এবং নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় ২৯ জন করে ইলেক্টর রয়েছে। অন্যদিকে কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত আলাস্কা, ডিলাওয়্যার, ভারমন্ট ও ওইয়োমিংয়ে মাত্র তিনজন করে ইলেক্টর রয়েছে। ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ৩ জন ইলেক্টর রয়েছে।
ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরাই ১৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন।
সফল প্রার্থীকে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে অবশ্যই ২৭০টি ভোট পেতে হবে।
কোন কোন রাজ্য ঐতিহাসিকভাবে প্রতি নির্বাচনেই ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। অন্য রাজ্যগুলো রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে।
তবে বেশ কয়েকটি রাজ্যের ভোটাররা নির্দিষ্ট কোনো দলকেই সমর্থন দেয় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যগুলোতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইলেক্টর রয়েছে। এ রাজ্যগুলোকেই নির্বাচনের ব্যাটেলগ্রাউন্ড বা ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এই অঙ্গরাজ্যগুলো এবং এর ইলেক্টরদের সংখ্যা হচ্ছে- ফ্লোরিডা (২৯), পেনসিলভেনিয়া (২০) এবং ওহাইও (১৮)টি।
এদের মধ্যে ওহাইও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৪ সাল থেকে এই রাজ্যের ভোটেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্ধারিত হয়ে আসছে। ফলে ওহাইও রাজ্যের প্রতি জোর সব দলের প্রার্থীদের।
আজ ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকরা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫ জন সদস্যকে নির্বাচিত করার জন্য ভোট দেবেন। এরা ২ বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়াও ভোটাররা ১০০ সিনেটরের মধ্যে ৩৪ জনকে নির্বাচিত করতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরা ছয় বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটাররা এ দিন ১২টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরকেও নির্বাচিত করবেন।
হিলারির আতঙ্কিত না হওয়ার ৫ কারণ
হিলারি ক্লিনটন শুধু ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই লড়ছেন না, তিনি ক্রেমলিন এবং এফবিআইয়ের এক দুর্বৃত্ত পরিচালকের বিরুদ্ধেও লড়ছেন। একই সঙ্গে লড়ছেন অনেক রাজ্যের ডানপন্থী সংসদ, বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর ও কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী প্রচারকদের বিরুদ্ধেও। কালোদের ভোটাধিকার বঞ্চিত করা এবং তাদের ভোট প্রয়োগ ঠেকাতে তারা আইনগতভাবে যা যা করার তার সব কিছুই করেছে। কোনো সন্দেহ নেই, নির্বাচনের রাতে আমরা জানতে পারব, তারা কালোদের ভোট দেয়া ঠেকাতে বেআইনি কাজও করেছে।
তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এত কিছু সত্ত্বেও হিলারি এগিয়ে রয়েছেন এখনো। এগিয়ে থাকার অনেক কারণের মধ্যে পাঁচটি এরকমÑ
অগ্রিম ভোট : বিভিন্ন রাজ্যে যারা অগ্রিম ভোট দিতে গেছেন, তাদের মধ্যে রিপাবলিকানদের তুলনায় ডেমোক্র্যাট ভোটারদের সংখ্যা অনেক বেশি। বেশ কয়েকটি রাজ্যে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট দলের নিবন্ধিত অগ্রিম ভোটাররা বেশি উপস্থিত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো নেভাদা রাজ্য। সেখানে অগ্রিম ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে হিলারি এগিয়ে রয়েছেন বিপুলভাবে। যেমন ১ নভেম্বর পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট দলের ৪৩ শতাংশ নিবন্ধিত অগ্রিম ভোটার ভোট দিয়েছেন। আর রিপাবলিকান দলের ৩৭ শতাংশ নিবন্ধিত অগ্রিম ভোটার ভোট দিয়েছেন। ফাইভ থার্টি এইট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ রাজ্যে ট্রাম্পকে বিজয়ী হতে হলে ভোটের দিন বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করতে হবে হিলারিকে। নর্থ ক্যারোলিনায়ও হিলারি এগিয়ে রয়েছেন। সেখানে ইতোমধ্যে ১৮ লাখ ভোটার অগ্রিম ভোট দিয়েছেন। এ রাজ্যে ৪৪ লাখ ভোটার ভোট দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যারা ভোট দিয়েছেন, তাতে হিলারি শতকরা ১১ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। এখানেও ট্রাম্পকে জিততে হলে ভোটের দিন প্রাপ্ত ভোটে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে হবে তাকে। ফ্লোরিডার খবর তেমন ভালো ছিল না হিলারির জন্য। তবে শেষ পর্যন্ত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অগ্রিম প্রদত্ত ভোটে সেখানেও হিলারি শতকরা ৮ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্পের বিপরীতে।
অগ্রিম ভোটের একটি সমস্যা : অগ্রিম যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতি কম লক্ষ করা গেছে। এটা সম্ভবত তাদের ভোটাধিকার হরণসংক্রান্ত কারণে হয়েছে, যা আগে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে ট্রাম্পবিরোধী কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে যে কথা ছড়িয়ে পড়েছে, সে বিষয়টি হিলারি এবং তার প্রতিনিধিদের নিশ্চিত হতে হবে।
ইলেক্টোরাল কলেজ হিসাব : ইলেক্টোরাল ভোটের হিসাব ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের জন্য এখন পর্যন্ত খুবই ভীতিকর। উদ্ভট যদি কিছু না ঘটে তাহলে কয়েকটি রাজ্যে ২৪৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে, যা অন্তত হিলারির হাতছাড়া হবে না। আমি এর মধ্যে মিশিগান, উইসকনসিন ও পেনসিলভানিয়াকে রাখছি। কিন্তু ভার্জিনিয়াকে রাখছি না। ভার্জিনিয়া ট্রাম্পের প্রতি নমনীয়। হিলারির নিশ্চিত ২৪৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের বিপরীতে ট্রাম্পের রয়েছে মাত্র ১৮০টি। অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু যে হতে পারে না তা নয়। উইসকনসিনে ভোটার প্রতিরোধের যে খবর বের হয়েছে, তা উদ্বেগজনক লোকজনের কাছে। আর মিশিগানে কৃষ্ণাঙ্গরা যাতে ভোট দিতে আসতে পারেন, সেটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে হিলারি শিবিরকে। শুধু মনে রাখুন ফ্লোরিডা, ওহাইও, নর্থ ক্যারোলিনা, কলোরাডো, অ্যারিজোনা, আইওয়া রাজ্যে হিলারি জয়লাভ না-ও করতে পারেন। তারপরও তিনি তার প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন।
লেটিনো হিসপ্যানিক ভোটার উপস্থিতি : যেসব রাজ্যে অগ্রিম ভোট চলছে, সেখানে ল্যাটিনো ও হিসপ্যানিক ভোটারদের জয়জয়কার উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ভোটের দিন পর্যন্ত যদি তাদের এ উপস্থিতি বহাল থাকে তবে ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা, কলোরাডো, নেভাদা ও নিউ মেক্সিকো রাজ্যে হিলারির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে (মেক্সিকো, কিউবা, পুয়ের্তোরিকো, আর্জেন্টিনা, কোস্টারিকাসহ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অধিবাসীরা ল্যাটিনো নামে পরিচিত। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে স্পেন উপনিবেশ সূত্রে আমেরিকান নাগরিকেরা হিসপ্যানিক নামে পরিচিত)। ফ্লোরিডার কথা পড়ার সময় আপনি মনে মনে কিউবার কথা ভাববেন। ২০১২ সালের নির্বাচনের সময় ওবামা এবং রমনি কিউবান ভোটারদের ৫০-৫০ ভাগ করতে পেরেছিলেন। ফ্লোরিডায় ল্যাটিনো ভোটারদের অর্ধেকই কিউবান। বাকি অর্ধেক পুয়ের্তোরিকান। সুতরাং হিলারি ল্যাটিনো-কিউবান ভোটারদের অর্ধেক পাবেন। আর পুয়ের্তোরিকানদেরও ৮৫ শতাংশ ভোট পাবেন তিনি। সুতরাং ফ্লোরিডার ল্যাটিনো ভোটারদের তিন ভাগের দুই ভাগই পাবেন হিলারি।
কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে : অনেক রাজ্যে কালোদের ভোটদানকে যতটা সম্ভব কঠিন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কালোদের ভোটদানের ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হবে না এরকম প্রমাণ খুব কমই আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনগুলোতে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ব্যতিক্রম কিছু না হলে ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে শোচনীয় অবস্থানে রয়েছেন। আগেরবার রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রমনি তবুও ৫ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গের ভোট পেয়েছিলেন।
সতর্কবাণী : ভোটের দিন কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকায় কম ভোটিং মেশিন রাখা হতে পারে। যেসব রাজ্যে অগ্রিম ভোট হয়েছে, সেসব রাজ্যে যেমন কম কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার উপস্থিত হয়েছেন, তেমনি ভোটের দিনও তাদের উপস্থিতি ঠেকিয়ে দেয়া হতে পারে। নির্বাচনের দিন যদি কৃষ্ণাঙ্গদের ব্যাপক উপস্থিতি ঘটে, তাহলে তাদের দমন করার কৌশল গ্রহণ করা হতে পারে। ভোটকেন্দ্রে কৃষ্ণাঙ্গরা যদি অধিক উপস্থিত হয় এবং সেখানে কম ভোটিং মেশিন স্থাপন করা হয়, তাহলে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হবে এবং ভোটের সময় পার হয়ে গেলেও তাদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতে পারে। তিন-চার ঘণ্টা সময় বাড়িয়েও তাদের ভোটদান সম্পন্ন করা না-ও যেতে পারে। ট্রাম্প যেসব উক্তি করেছেন, তাতে এসব এলাকায় সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে। হিলারি শিবিরকে এ বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন থাকতে হবে।
গ্রাউন্ড গেম : হিলারি নির্বাচনী প্রচারণার ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রবি মুককে। ভোটার আকর্ষণে তিনি যে বিশাল ও আধুনিক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন, তা এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মধ্যে অন্যতম। তাদের গ্রাউন্ড গেমের বিপরীতে ট্রাম্পের অবস্থা একেবারেই নাজুক। শেষ মুহূর্তে এফবিআই পরিচালক জেমস কমির চালে কিছু ভাসমান ভোট হিলারির কাছ থেকে ছুটে যেতে পারে, তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সার্বিক পরিস্থিতিতে হিলারি শিবিরের ভালো অনুভূতি সৃষ্টি হওয়ার কারণ রয়েছে এখন পর্যন্ত। তার পরও একটি শঙ্কা আছে। দেশ হিসেবে আমরা একটি অন্ধকার স্থানে আছি। আর অন্ধকারে অদ্ভুত অনেক ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আমাদের সামনে সে ধরনের কোনো বিপর্যয় বয়ে আনতে হলে বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে হবে।