স্টাফ রিপোর্টার: ১১ ফেব্রুয়ারি, এই দিনটিতে নিজ ফ্ল্যাটে খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি। আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এ নৃশংস ঘটনা ঘটে।
কিন্তু চার বছর পরও চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় সাগর-রুনির পরিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর পুরোপুরি আস্থা হারিয়েছেন। আর সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মেঘ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করলেও মিস করছে শৈশবে বাবা-মায়ের আদর।
সাগর-রুনির পরিবার জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আর কোনো আস্থা নেই, তাদের কাছে কোন প্রত্যাশাও নেই। উপরের চাপ থাকলে বিচার পাওয়া যায় না। তবে যতোদিন বেঁচে থাকবেন পরিবারের সদস্যদের হারানোর বিচার চেয়ে যাবেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের কোনো এক সময় পশ্চিম রাজাবাজারের একটি ভাড়া বাসায় দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।
ঘটনার চার বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাব। তবে আদালতের নির্দেশে প্রতিমাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে আসছে তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব সদর দফতরের তদন্ত বিভাগের উপ-পরিচালক ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মহিউদ্দিন আহমেদ।
সর্বশেষ গত ১৮ জানুয়ারি চার্জশিট দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে র্যাব। ৩৯ বারের মতো পুনরায় সময় চাওয়া হলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এমএম ইউনুস খানের আদালত আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট দাখিলের দিন ধার্য করেন।
মেহরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘চার বছরেও এ মামলা নিয়ে যে গড়িমসি করছে এর ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। তাদের যে কর্মকাণ্ড তাতে আমাদের কোনো এক্সপেকটেশনও নেই। তবে আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি, যতোদিন বেঁচে আছি বিচার চাইব।’
চার বছরেও মামলার সামান্যতম অগ্রগতি নেই, শুধুমাত্র চেষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘র্যাব এখনো দোষীদের চিহ্নিত করতে পারল না। র্যাবের তদন্তে আমরা হতাশ। আদৌ তদন্ত হচ্ছে কি না -সে ব্যপারে আমাদের চরম সন্দেহ রয়েছে।’
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে কোনো ধরনের হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন কি না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না এমন কিছু হয়নি। তবে র্যাব তদন্তের কী করছে, কতটুকু করছে, সে ব্যপারে আমরা কিছুই জানি না।’
‘সাংবাদিক মহলের কাছে আপনাদের কোনো প্রত্যাশা আছে কি না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিচার পাওয়াটা হচ্ছে মেইন ব্যাপার। আলাদা করে সাংবাদিকদের কাছে চাওয়ার কিছু নেই। তারা তাদের মতো করে তাদের সহকর্মীদের হত্যার বিচার চাইবে।’
চার বছর আগে মর্মান্তিকভাবে খুন হওয়া এই সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘ। বর্তমানে সে গুলশানের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (বিআইটি) স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।
‘মেঘ এমনিতে স্বাভাবিক আছে’ উল্লেখ করে মেঘের মামা নওশের আলম বলেন, ‘সে লেখাপড়া করছে, সবকিছু ঠিক আছে। তবে তার ছোটবেলার অনেক স্মৃতিই মনে আছে। সেই কথাগুলো মনে হলে মাঝে মধ্যে মন খারাপ করে। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। চার দিন তদন্তের পর চাঞ্চল্যকর হিসেবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু দুই মাসে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে উচ্চ আদালত মামলাটি র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। বর্তমানে র্যাবের ইনভেস্টিগেশন শাখা হত্যাকাণ্ডটি তদন্ত করছে। তারাও এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো সফলতার মুখ দেখেনি।
মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে র্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। র্যাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। মেনশন (উল্লেখ) করার মতো কোনো অগ্রগতি এখনও নেই। পেলে আবশ্যই মিডিয়াকে জানানো হবে।’
তদন্ত কর্মকর্তা ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তদন্ত চলছে। বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের তদন্ত এগোচ্ছে। আমরা স্বাধীনভাবে তদন্ত করছি। এছাড়া পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছি। আমরা আশাবাদী এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উৎঘাটন হবে।’
‘এ ঘটনায় ১৪৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ৮ জন গ্রেফতার রয়েছে। এদের মধ্যে তিন জন জামিনে মুক্ত আছেন’ বলেও জানান তিনি।
‘র্যাব চাইলে আসামীদের আটক করতে পারে, কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তি থাকায় আসামীদের আটক করা হচ্ছে না’ বলে অভিযোগ করেছেন সাগর সরোয়ারের মা সালেহা মনির।
তিনি বলেন, ‘বিচার পাব না। উপরের চাপ থাকলে বিচার পাওয়া যায় না। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে। তাদের ইশারায় সব কিছু হচ্ছে।’
‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে’- র্যাবের এ দাবির প্রেক্ষিতে তিনি আরো বলেন, ‘চার বছরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেনটি আদালতে জমা দিতে পারেনি। তাহলে তো বোঝা যায়, তারা কতটা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।’