অগ্রসর রিপোর্ট: গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির এবং বন্দি বিনিময়ের জন্য একটি নতুন প্রস্তাবিত চুক্তি প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।
শুক্রবার ইসরায়েলি মিডিয়ার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
ইসরায়েলের চ্যানেল১৩ এক প্রতিবেদনে বলছে, গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির জন্য ইসরায়েলি আলোচকরা দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং মন্ত্রিসভাকে একটি নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, যা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হামাসের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি নতুন প্রস্তাবে- (যা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি) হামাস হাতে জিম্মিদের মধ্যে ২০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিনিময়ে গাজা উপত্যকায় কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি এবং এই সময়ের মধ্যে উপত্যকার কিছু অংশ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে। তবে প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির জন্য কত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে – তা পরে নির্ধারণ করা হবে৷
চ্যানেলটি আরও জানিয়েছে, মিশর এই চুক্তির জন্য জোর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, একজন মিশরীয় রাষ্ট্রদূত শুক্রবার ইসরায়েলে বিস্তারিত আলোচনা করতে আসবেন। তবে প্রতিবেদনে কায়রোর পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকমাস ধরে কাতার, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় গাজায় একটি বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ একাধিক বিশ্ব নেতা দাবি করেছিলেন রমজান মাস শুরুর আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে। তবে রমজান শেষ হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো অনিশ্চিত।
এদিকে গত মাসের শেষের দিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠক করেছেন ইসরায়েল, কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। সেই বৈঠক শেষে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস এবং ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মিসর ও কাতারের কর্মকর্তারা।
সেই বৈঠকেই হামাসকে ৪০ দিন যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ কাতার ও মিসর। তবে কয়েক দফায় বৈঠক হলেও, কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েল। এতে কোনো ফলাফল ছাড়াই যুদ্ধবিরতির আলোচনা শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। চার মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারীও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১৩৪ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।