পাহাড়, নদী, ছড়া, ঝিরি, ঝরনা ও সমতল ভূমি মিলে একটি অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত জেলা খাগড়াছড়ি। প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর রহস্যময়তায় ঘেরা জেলায় রয়েছে বিভিন্ন নামের পর্যটন কেন্দ্র। প্রকৃতিপ্রেমী, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় বা ভ্রমণবিলাসীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি অন্যতম জনপ্রিয় স্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে খুব সহজে খাগড়াছড়িতে ঘোরা যায়। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ছাড়াও পাহাড়ি এ জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। ফলে এখানকার পর্যটন খাতের বৈচিত্র্যতাও বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে রাঙ্গামাটির সাজেকে যাওয়ার গেটওয়ে হিসেবেও খাগড়াছড়ি অন্যতম। আছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সংযোগের জন্য করা দৃষ্টিনন্দন মৈত্রী সেতু।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মোট আয়তন ২ হাজার ৬৯৯.৫৫ বর্গকিলোমিটার। এই জেলার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা, পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য অবস্থিত।
তিন পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে পর্যটনের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে এই জেলাটি। যদিও অপার পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে খাগড়াছড়ি।
সবুজের চাদরে আচ্ছাদিত খাগড়াছড়ি জেলায় রয়েছে আকাশ-পাহাড়ের মিতালি, চেঙ্গি ও মাইনি উপত্যকার বিস্তীর্ণ সমতল জনপদ। এখানকার প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো হচ্ছে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রহস্যময় আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝরনা, তৈদুছড়া ঝরনা, নিউজিল্যান্ড পাড়া, হাতিমাথা, মানিকছড়ি ডিসি পার্ক, দেবতা পুকুর, মায়াবিনি লেক, জেলা পরিষদ পার্ক, হেরিটেজ পার্ক। ঘুরতে পারবেন পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির, মানিকছড়ি মং রাজবাড়ীতে।
এছাড়া রয়েছে নানা নামের বিভিন্ন খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের স্বাদের যেমন চাহিদা আছে তেমনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার আদলে গড়ে উঠেছে রেস্টুরেন্টও।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়ার মতো সব বিনোদন কেন্দ্রই পর্যটকদের আরো বেশি আকৃষ্ট করতে কমবেশি দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। অবকাঠামাগোতও উন্নয়ন হয়েছে। ইট-পাথরের ছোঁয়ায় সাজানো হয়েছে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রকে, যা আগের তুলনায় আরো বেশি আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের।
কিন্তু এতসব পর্যটন কেন্দ্র থাকার পরও গত বছর থেকে এ পর্যন্ত পর্যটক-খরায় ভুগছে খাগড়াছড়ি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগও। পর্যটকদের ধরে রাখার মতো পরিকল্পনা না থাকায় একই স্থানে বারবার ঘুরে ফিরে দেখছেন পর্যটকরা। পর্যটন বিকাশে অংশীজনরা যতটা ব্যবসাবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তার সবই বাণিজ্যিক। যেখানে সাজেকে ইকো ট্যুরিজম ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এবারের ঈদ ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৈসাবি উৎসব পর পর হওয়ায় খাগড়াছড়ি বেশ রঙিন ও উৎসবমুখর পরিবেশ থাকবে। কিন্তু পর্যটকের আনাগোনার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত হতাশ হোটেল, মোটেল ব্যবসায়ীরা। গত বছর ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়ির হোটেল মোটেলে মোটামুটি বুকিং ছিল। এবার তেমন নেই বলছেন ব্যবসায়ীরা।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের প্রধান রিসিপশনিস্ট মং জানান, এবার বুকিং নেই। গত বছরের তুলনায় কম। ১০-১৫টা রুমের বুকিং আছে। এছাড়া ১০-১৫ তারিখের কয়েকটি বুকিং বাতিল হয়েছে।
খাগড়াছড়ি শহরের আবাসিক হোটেল নূর মালিক তারেক আহমেদ চৌধুরী জানান, এখন পর্যন্ত হোটেলের রুমের বুকিং নেই। যে কয়েকটি বুকিং আছে তা আশানুরূপ নয়। সাজেকের পর্যটকদের আসা-যাওয়া বাড়লে হয়তো রুমের বুকিং বাড়তে পারে বলে জনিয়েছেন হোটেল মালিক।
পর্যটকদের জন্য অন্যতম পরিচিত হোটেল গাইরিং। এ বছর সেখানেও বুকিং আছে ৪০/৫০ ভাগ, যা গত বছরের তুলনায় কম। যে পরিমাণ বুকিং থাকার কথা তা নেই। ১২-১৪ এপ্রিল—এ দুইদিনে জন্য মোটামুটি বুকিং আছে বলে জানিয়েছেন সহকারী ম্যানেজার সীমা ত্রিপুরা।
এদিকে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মুক্তাধর জানিয়েছেন উৎসব এবং পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। যেকোনো ধরনের সহায়তার জন্য পুলিশ পর্যটকদের পাশে থাকবে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোয়ও পুলিশি টহল থাকবে।