সামনের দিনে ইলেকট্রনিকস গ্যাজেট নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোনো ধরনের হাত বা অঙ্গের স্পর্শের প্রয়োজন না-ও হতে পারে। শুধু আমাদের মন বলবে এটা হোক, আর গ্যাজেটগুলো সেটাই করবে। যদিও এত দিন হলিউড সাইফাই সিনেমাতে টেলিপ্যাথিক এসব কল্পকাহিনি দেখে এলেও ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে বাস্তব জীবনেও টেলিপ্যাথির দেখা মিলতে পারে সহসাই।
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন ব্রেইনুচিপ স্টার্টআপ কম্পানি ‘নিউরালিংক’কে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মানুষের শরীরে চিপ বসানোর প্রথম পরীক্ষাটি চালানোর অনুমতি দিয়েছিল।
প্যারালিসিস বা নানা ধরনের নিউরোলোজিক্যাল ও স্নায়বিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে ‘নিউরালিংক’। মস্তিষ্কের যে অংশটি মানুষের নড়াচড়ার ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে একটি রোবট সার্জারি করে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) স্থাপন করে। মাস্কের কম্পানি মানুষের চিন্তাকে পুঁজি করে কম্পিউটারের কারসর ও কি-বোর্ড নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাস্ক দাবি করেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় মস্তিষ্কের নিউরনের বেশ ভালো সাড়া লক্ষ করা গেছে ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিটিও পুরোপুরি সুস্থ আছেন।
পৃথিবীর প্রাচীনতম বিজ্ঞান সোসাইটি রয়াল সোসাইটির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই)-এর মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের মনকে একীভূত করে তারবিহীন যোগাযোগ সম্ভব। অবশ্য ২০১৫ সালে ফেসবুক (বর্তমানে মেটা) অনুরূপ একটি গবেষণায় বিনিয়োগ করেছিল। তারা একটি হেডসেটের মাধ্যমে মানুষের চিন্তাকে ডিকোড করে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখির সুযোগ চালুর ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। তবে মাত্র চার বছর পরেই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে নিউরালিংক ছাড়াও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান টেলিপ্যাথি নিয়ে কাজ করছে। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ব্ল্যাকরক নিউরোটেক’ এর মধ্যে অন্যতম।
বিশ্বব্যাপী ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস জাতীয় কোনো আইন নেয়। তাই যেকোনো সময় এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এরই মধ্যে নিউরালিংকের পরীক্ষার সময় প্রায় ১৫০০ প্রাণীকে হত্যার অভিযোগও সামনে এসেছে।
তবে সত্যিটা হলো, বিসিআইয়ের টেলিপ্যাথি প্রযুক্তি অন্যান্য সব প্রযুক্তির মতো সস্তা ও সর্বজনীন হবে না। টেলিপ্যাথির স্মার্ট ডিভাইসগুলোকে মস্তিষ্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে এখন থেকেই পকেট গরম করতে লেগে পড়তে হবে। কারণ এসব করতে চাইলে বেশ খরচ করতে হবে।