রমজানের শুরু আর বাড়ছে গরমের দাবদাহ। গরমের তীব্রতা বাড়ায় বেশির ভাগ মানুষই যেন কাহিলও হয়ে পড়ছেন। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। এই গরমে সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় ঘেমে নেয়ে মাথা ব্যথা, বমিভাব, শরীরে অস্বস্তি, ডায়রিয়া, অ্যালার্জি ও হিট স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তাই অতিরিক্ত গরমে নিজেকে সুস্থ রাখতে সচেতন হতে হবে নিজেদেরই। গরমে সুস্থ থাকতে কিছু সচেতনতামুলক পরামর্শ দিয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. দিপন চৌধুরী। এ সম্পর্কে তিনি বলেন –
সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। আর যেহেতু গরমকালে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ বের হয়ে যায় তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন, পানি ও ফলের রস খেতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ডাবের পানিও এসময় অত্যন্ত উপকারী।
এছাড়া অত্যধিক মাত্রায় ঘাম হলে শরীর থেকে সব পানি বেরিয়ে যায়। তাতে পেটের সমস্যাও তৈরি হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে পেট ফুলে থাকে অনেকের। এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়, বেশি পরিমাণে পানি পান করা। সেই সাথে শরবত ও তরল খাবার বেশি খাওয়া।
মেলাটোনিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত গরমে আমাদের শরীরের মেলাটোনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। তার মাত্রা কমে গেলে আমাদের শরীরের ক্লান্তিভাব বেশি হয়।
কারণ, গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য ঘাম হওয়া প্রয়োজন। আর সেটা করতে শরীরের যথেষ্ট পরিশ্রম হয়। তাই শরীর অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ জন্য রোদে বের হওয়ার আগে ছাতা ব্যবহার করতে হবে সেই সঙ্গে সানগ্লাস।
শরীরে মেলাটোনিনের সংখ্যা কমে গেলে ঘুম আসতেও দেরি হয়। যেহেতু গরমে দিন বড় এ জন্য রাতে শরীর মানিয়ে নিতে সময় নেয়। ঘুম আসতে দেরি হয়। ঘুমের অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। ঘুমের সময় সঙ্গে ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে রাখবেন না।
অনেকসময় শরীর হুট করেই তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না। তাতেই জ্বর, ঠাণ্ডালাগা, মাথাধরার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এ জন্য প্রটেকশন নিয়ে তারপর বাইরে বের হওয়া উচিত
গরমে হালকা সুতির পোশাক পরাই ভালো। যাতে ঘাম হলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। এছাড়া ঢাকা জুতোর বদলে খোলা চপ্পল ব্যবহার করতে পারেন। গরমে বিয়ার, সোডা বা নরম পানীয় না খাওয়াই ভালো। এতে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বে়ড়ে যায়। এডাড়া চা বা কফির পরিমাণও কমিয়ে ফেলা শরীরের জন্য খুব ভালো।
গরমে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং জ্বর, ঠান্ডার সংক্রমণ ঠেকাতে টিস্যু ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া এসময় বাইরে থেকে ফিরেই ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি সরাসরি পান করা যাবে না। এসি রুমে থাকলে তাপমাত্রা খুব বেশি না কমিয়ে বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রিতে কমানো যায়।
এছাড়া গরমে জীবাণু হাত থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত হাত ধুয়া উচিত। এসময় ঘনঘন চোখ-নাকে হাত না দেয়া ভালো। আর হাত ধোয়ার পরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন এবং বারবার হাত ধুতে না চাইলে ব্যাগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা উচিত। এতে প্রয়োজনে হাতে লাগিয়ে নিতে পারেন।
শিশুকে গরমে প্রতিদিন গোসল করাতে ভুলবেন না। সামান্য কাশি হলেও করাবেন। সম্ভব হলে আদাপানি, তুলসীপানি খাওয়াতে পারেন। গোসলের পর অবশ্যই শিশূর চুলটা ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। ঘেমে গেলেও ভালোভাবে চুলটা শুকনো করে মুছে দিন এছাড়া টানা কয়েক দিন থাকে তবে এসবের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।