অগ্রসর রিপোর্ট : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে ছাড়াই ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে শেষ মুহূর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল করা হয়েছে।
তবে, অন্য একটি সূত্র বলছে, সম্প্রতি বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে সমালোচিত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশেষ করে ‘শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছি’ এমন বক্তব্য দিয়ে সরকারকে বেশি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেন তিনি। তাই এ সফর থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এর আগে, এদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, রেলপথমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৭১ জন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন রোববার (৪ সেপ্টম্বর) বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, কোয়াড, সংখ্যালঘু নির্যাতন, পানি ভাগাভাগি, সীমান্ত সুরক্ষা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। একইসঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরিবর্তিত ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপট, চীন-তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গও আলোচনায় স্থান পেতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় নিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি
সফরেরর প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে। পরে তিনি দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগাহ পরিদর্শন করবেন। এ দিনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং আদানি গ্রুপ চেয়ারম্যান গৌতম আদানি।
সফরের দ্বিতীয় দিন ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘হায়দরাবাদ হাউস’-এ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং একান্ত বৈঠক করবেন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরে দুই প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ প্রেস বিবৃতি দেবেন।
ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখাড়ের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
৭ সেপ্টেম্বর দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের উত্তরসূরীদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
সফর শেষে ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন শেখ হাসিনা।