অগ্রসর রিপোর্ট: দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য কারিগরি শিক্ষা একটি হাতিয়ার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, যে দেশ কারিগরি শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষায় বেশি মনোযোগ দিয়েছে সেই দেশ তত উন্নত-সমৃদ্ধ হয়েছে।
শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ভাটেরচর দে এ মান্নান উচ্চ বিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্যের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশাল জনসমুদ্রকে জনসম্পদে পরিণত করতে কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষা একটি হাতিয়ার। যে দেশ কারিগরি শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষায় বেশি মনোযোগ দিয়েছে সেই দেশ তত উন্নত-সমৃদ্ধ হয়েছে। জার্মানির মত উন্নত দেশে শতকরা ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলে দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রাক-প্রাথমিক হতে উচ্চ ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষা হবে আনন্দদায়ক। ডিগ্রি কোর্স করার মধ্যে কারিগরি শিক্ষা থাকবে।
এসময় তিনি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে কারিকুলাম নির্ধারণ করার আহ্বান জানান।
সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে প্রয়োগিক শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের কারিকুলাম নিয়ে ভাবুক। তারা ইন্ডাস্ট্রি অ্যাকাডেমিয়া লিংকেজ তৈরি করুক। কাজের জগতের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে তাদের কারিকুলাম ঠিক করুক। সেই কাজের জগতে ইন্টার্নি করার ব্যবস্থা করুক। আমাদের শিক্ষার্থীরা কর্ম-উপযোগী হয়ে বের হোক। ’
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মডিউলার এডুকেশন ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সবার আস্ত একটা বড় ডিগ্রি করার দরকার নেই। শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট করে নতুন নতুন দক্ষতা শিখে নেবে। ছোট ছোট ডিপ্লোমা করবে, কিছু সার্টিফিকেট কোর্স করবে, বড় ডিপ্লোমা করবে যার যেমন সুবিধা। শেখার জন্য সবাই কাজের জায়গা ছেড়ে আসতে পারবে না। সে কারণে অনলাইন অফ লাইন মিলিয়ে ব্লেন্ডেড এডুকেশনে যুক্ত হবে। আমরা সেই ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে চাইছি। ‘
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা বড় প্রবণতা আছে সব শিক্ষার্থী চায় অনার্স-মাস্টার্স পড়তে। পৃথিবীর কোথাও এতো অনার্স মাস্টার্স পড়ে না। একটি পর্যায়ের পর অনেক শিক্ষার্থী বৃত্তিমূলক, কারিগরি শিক্ষায় চলে যাবে। জার্মানির মতো উন্নত দেশে শতকরা ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় পড়ে। যে দেশ অনেক বেশি উন্নতি করেছে, সেই দেশের অনেক বেশি কারিগরি শিক্ষায় মনোনিবেশ করেছে। আর তা দিয়েই, তারা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়েছে। আমাদের সেই পথে হাঁটতে হবে। এ কারণে আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলেতে কর্ম-উপযোগী শিক্ষা দেওয়া নিশ্চিত করা যায়। যে শিক্ষার্থী অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বের হয়, সে যেন কাজের জগতের চাহিদা অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জন করে বের হয়। তার যেন চাকরি পেতে সমস্যা না হয়, উদ্যোক্তা হতে চাইলে উদ্যোক্তা হতে পারে। ’
‘দেশের উচ্চশিক্ষার তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করে জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা চাইছি যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ, বিএসসি, বি-কম পড়বে, বা ডিগ্রি কোর্স করবে তারা আইসিটি, ভাষা, উদ্যোক্তা হওয়ার মতো কোর্স যেন পড়ে। তাছাড়া পোস্ট গ্র্যাজুয়েট নানা বিষয়ে দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে তেমন বিষয়ে ডিপ্লোমা তারা করতে পারে।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য দেন মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের সাংসদ মৃণাল কান্তি দাস।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক, কাজী নাহিদ রসুল, মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার, আব্দূল মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আতাউর রহমান মিয়াজী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা, পরিচালক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিরুল ইসলাম শিকদার, গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক গজারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রেফায়েত উল্লাহ খান।