অগ্রসর রিপোর্ট :শুভেন্দু অধিকারীর পর এখন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। দলবদলের জল্পনার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন বনমন্ত্রী, রাজীব। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছেও। প্রটোকল অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপারিশ করলেই তা গ্রহণ করবেন রাজ্যপাল।
তৃণমূল কংগ্রেসের স্ট্রং ম্যান শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেয়ার আগে থেকেই রীতিমতো বেসুরো রাজীব। একাধিকবার প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছেন তিনি। তৃণমূলের অভ্যন্তরে যে তার কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে, তাও জনসমক্ষে বলতে শোনা গিয়েছে রাজ্যের বনমন্ত্রীকে। একাধিক মন্ত্রিসভার বৈঠকেও গরহাজির থেকেছেন তিনি। বনমন্ত্রীর মানভঞ্জনের জন্য স্বয়ং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে দায়িত্ব দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আসরে নেমেছিলেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। দলের তরফে তার মানভঞ্জনের চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু সেসব কার্যত কোনো কাজেই এল না। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজীব। তবে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ এবং বিধায়ক পদ ছাড়েননি রাজীব। শুভেন্দু অধিকারী, লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র পর এই নিয়ে তিনজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার থেকে ইস্তফা দিলেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন তিনি। তার মন্ত্রিত্ব ছাড়ার প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাচ্ছিলেন না বেশ কিছুদিন ধরেই। ওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। দলে থেকেও কোনো কাজ করছিলেন না।
এদিকে, মগরাহাটের সভা থেকে ফের মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছেন, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে সলিমদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দিদি এখানে বলছেন আমরা নাকি জাতপাতের রাজনীতি করি। জাতপাতের রাজনীতি উনি করেন। মুসলিমদের মানুষের থেকে আলাদা করে রেখেছেন। তাদের শুধু ভোটার করেই রেখেছেন। উন্নয়ন করেননি। পাশাপাশি, আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেছেন একুশে বিজেপি ক্ষমতায় আসবেই। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সংখ্যালঘু প্রভাবিত মগরাহাট পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ধামুয়ায় সভা করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি কংগ্রেস ও বামদেরও আক্রমণ করেছেন তিনি। প্রশ্ন করেছেন, কোন সরকার মুসলিম সমাজের জন্য কী করেছে? বলেছেন, সবাই আপনাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আপনাদের ভুল বুঝিয়েছে এ রাজ্যের সব সরকারই। মুসলিমদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেশি, কারণ চাকরি নেই, কাজ নেই। তাই তারা অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য হয়। আমাদের একবার সুযোগ দিয়ে দেখুন। ভারতবর্ষের মতো দেশে একজন হিন্দুর যা অধিকার ঠিক সমান অধিকার একজন মুসলিমেরও তা আছে। বিজেপি সেটাই বিশ্বাস করে। সংখ্যালঘু প্রভাবিত এলাকায় ভোট টানতে তিনি আরও বলেছেন, ভয় দেখিয়ে সংখ্যালঘুদের বিজেপির থেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা হয়েছে এত দিন। আপনারা শুনে রাখুন, বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দাঙ্গা বন্ধ হবে, সকলে কাজ পাবে, আইনের সুশাসন কার্যকর হবে রাজ্যে। যদি আপনাদের কেউ ভুল বোঝায় তাকে বলুন, বিজেপিশাসিত অন্য রাজ্যে তো মুসলিমরা চাকরি করছে, কাজ করছে, সেখানে তাদের গায়ে হাত পড়ছে না।
এর মধ্যেই শনিবার কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নেতাজির জন্মদিনে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে কলকাতা। কারণ, এদিন একদিকে যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর অন্যদিকে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রা। নেতাজি জয়ন্তী উপলক্ষে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্যামবাজার থেকে রেডরোড পর্যন্ত পদযাত্রা করবেন। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা শহর। ইতিমধ্যে, শহরে এসে পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব সিকিউরিটি টিম। কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় কড়াকড়ি নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলার প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে কেন্দ্র যা ঘোষণা করেছে তা একান্তই তাদের বিষয়,পরাক্রম দিবস নামে আমরা খুশি নই, নেতাজির পরিবারও খুশি নয়। দেশনায়ক দিবস বা দেশপ্রেম দিবস নামকরণ হলেই ভালো হতো। নেতাজির জন্মদিনকে কেন্দ্রের পরাক্রম দিবস ঘোষণায় এমনটাই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পুরুলিয়ার সভা থেকে বলেছিলেন, যে যেভাবে ইচ্ছে পালন করুক, তৃণমূল কংগ্রেস ২৩ জানুয়ারি ১২টার সময় শ্যামবাজারে নেতাজির মূর্তির সামনে জমায়েত করবে। সেখান থেকে পদযাত্রা হবে।
এদিকে ২০০০-র বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নজরদারি চালাতে ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোন। শহরে শুরু হয়েছে নাকা চেকিং। যে জায়গায় প্রধানমন্ত্রী যাবেন তার পাশে রাখা থাকবে স্যান্ডবাঙ্কার। থাকবে কুইক রেসপন্স টিমও। অর্থাৎ আগামীকাল শহরের জোড়া কর্মসূচির আগে ও চলাকালীন কড়া নিরাপত্তায় আঁটোসাঁটো থাকবে শহর কলকাতা। প্রসঙ্গত, শিয়রে একুশের বিধানসভা ভোট। লক্ষ্য বাংলা দখল। কখনো বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা কখনো অমিত শাহ। দফায় দফায় বাংলা সফরে হাজির হয়েছে গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্ব। এবার বাংলায় আসছেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। বাঙালির আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে নেতাজি। আর বাংলা দখলের লড়ায়ে তাই বাঙালির নেতাজি আবেগকেও হাতিয়ার করতে চায় কেন্দ্র।