অগ্রসর রিপোর্ট : ভারতে আজ রোববার ভোটগ্রহণের শেষদিন। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ সহিংসতা, মিথ্যা সংবাদ, গুজব, প্রতিপক্ষের নেতা-নেত্রীদের অপমান, ঠাট্টা-বিদ্রুপ সবই হয়েছে। নেতা-নেতৃদের গলায় পুষ্পমাল্য পড়ারও হিড়িক পড়েছে।
গোয়ার সৈকত থেকে মুম্বাইয়ের বস্তি ও লাদাখের হিমায়ল পার্বত্যাঞ্চল পর্যন্ত সর্বত্র ভোট উৎসব দেখা দিয়েছে।
গত ছয় সপ্তাহ ধরে দেশটির প্রায় ৯০ কোটি ভোটার তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছে।
১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে ১১ এপ্রিল থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এর ১১ লাখ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিধান ও লজিস্টিক সাপোর্ট সরবরাহ একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল।
দেশব্যাপী ৪০ লাখ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিং সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটার যেন তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য হাতি ও উটের পিঠে করেও এগুলো প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোট গণনা হবে। কঠোর নিরাপত্তা ও পাহারার মাধ্যমে সিসিটিভির নজরদারিতে ভোট গণনা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ওই দিন দুপুর নাগাদ কে বিজয়ী হতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে আভাস পাওয়া যেতে পারে।
তবে বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পুনরায় জয় পেতে যাচ্ছে। তবে গতবারের মতো নিরঙ্কুশ নয়। এবার সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করবে বিজেপি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, মোদি ভারতজুড়ে ১৪২টি জনসভায় অংশ নেন। কখনো কখনো দিনে পাঁচটি জনসভায় অংশ নেন। শুধুমাত্র রাস্তায় জনসভার শোভাবর্ধনেই প্রায় এক টন গোলাপের মালা ব্যবহার করা হয়।
শনিবার ৬৮ বছর বয়সী এই হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা আধ্যাত্মিক ধ্যান করেন। দুই দিনের বিশেষ সফরে উত্তরাখ- আসেন মোদি। হিন্দুদের পবিত্রস্থান কেদারনাথ ও বদ্রীনাথ মন্দিরে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে কাটানোর সংকল্প নেন। সে অনুযায়ী, শনিবার পৌঁছে যান কেদারনাথ। গেরুয়া বসন পরে কেদারের গুহায় ধ্যানে বসে পড়েন তিনি।
দিল্লি ভিত্তিক সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ অনুমান করেছে, এই নির্বাচনে ব্যয় ৭শ’ কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করতে পারে। এর সিংহভাগ বিজেপি ব্যয় করেছে।
নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো সরগরম হয়ে ওঠে। দলগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে ‘সাইবার যুদ্ধ’ চালাতে শুরু করে। ভারতের লাখ লাখ ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা পোস্ট ও ম্যাসেজের মাধ্যমে নিজ নিজ দলের পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছে।
রাহুল ও মোদির বিরুদ্ধ বৈরী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজনের ভুয়া ছবি ও খবর ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
এছাড়া রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াংকা গান্ধীর মাতাল হওয়ার ভুয়া খবরও ছড়িয়েছে বিরোধীরা।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সরকার বিরোধী মাওবাদী বিদ্রোহীরা গত ১ মে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে হামলা চালিয়ে ১৫ সৈন্য ও তাদের গাড়ির চালককে হত্যা করে।
গত সপ্তাহে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবাংলাতেও নির্বাচনি সহিংসতা হয়েছে। সর্বাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত উত্তর প্রদেশে বিজেপি পরাজিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ক্ষতি পূরণের জন্য বিজেপি পশ্চিমবাংলায় জয়লাভের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।