মাগুরা প্রতিনিধি- মাগুরায় মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। ২৬ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে মায়ের কোলে চড়েই বাড়ি ফিরেছে সে। গতকাল বেলা দেড়টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে সুরাইয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে মা নাজমা বেগমের কোলে তুলে দেন। এছাড়া বাবা বাচ্চু ভূঁইয়ার হাতে সুরাইয়ার হাসপাতাল ছাড়ার পত্র তুলে দেন মোহাম্মদ নাসিম। ছাড়পত্রের আনুষ্ঠানিকতার আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু সুরাইয়ার মঙ্গল কামনা করে। অনুষ্ঠানে শিশুটির মা নাজমা বেগম বলেন, সব চিকিত্সক আমাকে সাহায্য করেছেন। তারা আমার শিশুকে ভালোবেসে চিকিত্সা দিয়েছেন। তাই সুরাইয়া আজ সুস্থ। হাসপাতালের সব চিকিত্সক ও নার্সকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি। কিন্তু তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখেছি। তার জন্য আমি ও আমার সন্তান সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি। তিনি আমার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাকে কী দিয়ে ধন্যবাদ জানাব বুঝতে পারছি না।
এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মাগুরা থেকে ঢাকা পর্যন্ত সব চিকিত্সকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুরাইয়া বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, যে শিশুটির বাঁচার সম্ভাবনাই ছিল না, সে শিশুই চিকিত্সকদের আন্তরিকতা ও মানবিক সেবায় জীবন ফিরে পেয়েছে। বিশ্বের মধ্যে ব্রাজিলে একটি শিশু মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আমাদের চিকিত্সকরা সুরাইয়াকে বাঁচিয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এজন্য চিকিত্সক দলকে ধন্যবাদ। এটা তরুণ চিকিত্সকদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
শিশুটির বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে ডা. খালিদ হাসান মোল্লা বলেন, পাঁচদিন ধরে শিশুটি নিজেই মায়ের দুধ খাচ্ছে, হজম করতে পারছে ও শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারছে। ক্ষতস্থানও শুকিয়ে গেছে। ক্রমান্বয়ে শিশুটির ওজন বাড়ছে। জন্মের সময় ১ কেজি ৮০০ গ্রাম ওজন থাকলেও এখন ২ কেজি ১৫০ গ্রাম। তিনি বলেন, আমরা বোর্ডের চিকিত্সকরা ২৬ দিন নিয়মিত এক বা একাধিকবার বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মনে হয়েছে, বাকি চিকিত্সাটা সে বাড়িতেই নিতে পারবে। তাই আমরা তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দিচ্ছি। অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ৬৫ হাজার টাকা সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়ার হাতে তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজরুল ইসলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান, অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ ইসমাইল খান, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হানিফ টাবলু, সহকারী অধ্যাপক কানিজ ফাতেমাসহ হাসপাতালের চিকিত্সক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে জরুরি অস্ত্রোপচারের পর সুরাইয়ার জন্ম হয়। ২৬ জুলাই ভোর ৪টার দিকে মা-বাবা ছাড়াই সুরাইয়াকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।