অগ্রসর রিপোর্ট: ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতা ও রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ ইরানের রাজধানী তেহরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছেন। এবার গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল।
বৃহস্পতিবার এক এক্স পোস্টে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট দাবি করেন, গত ১৩ জুলাই আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে বিমান হামলায় মোহাম্মদ দেইফকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
তিনি বলেন, ‘গাজার ওসামা বিন লাদেন’ হিসেবে পরিচিত হামাস কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ হত্যা উপত্যকার সামরিক এবং শাসক কর্তৃপক্ষ হিসাবে হামাসকে ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
গ্যালান্ট আরও বলেন, ‘হামাস সন্ত্রাসীরা হয় আত্মসমর্পণ করতে পারে অথবা তাদের নির্মূল করা হবে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সংস্থা হামাস সন্ত্রাসীদের অনুসরণ করবে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে গণহত্যার পরিকল্পনাকারী এবং হামলাকারীদের নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না।’
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও দাবি করেছে, তারা গোয়েন্দা তথ্য নিশ্চিত করেছে যে হামাস কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ ১৩ জুলাই তাকে লক্ষ্য করে একটি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
এদিকে হামাসের পক্ষ থেকে দেইফের মৃত্যুর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি আসেনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুলাই গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের ‘নিরাপদ অঞ্চল’ আল-মাওয়াসি এলাকায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৯০ ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ৩০০ জন আহত হয়েছেন। পরে ইসরায়েলের বাহিনী দাবি করে, আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল মোহাম্মদ দেইফকে হত্যা করা।
ইসরায়েলের এমন দাবির পরই গত ১৪ জুলাই হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দেইফকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, তবে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ ভালো আছেন এবং হামাসের সামরিক শাখার কার্যক্রম সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন।’
হামাসের দাবির প্রতিক্রিয়ায় সে সময় ইসরায়েলের চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ হার্জি হালেভি একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেছেন, ‘হামাস তাদের একটি কম্পাউন্ডে বিমান হামলার ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করার চেষ্টা করছে। শিগগিরই আদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
কে এই মোহাম্মদ দেইফ?
১৯৬৫ সালে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ দেইফ, যার আসল নাম মোহাম্মদ মাসরি, ১৯৯০-এর দশকে হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন এবং ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে চিহ্নিত করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এ হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে কমপক্ষে ১২শ জন নিহত হয়েছিল। এছাড়া হামাসের টানেলের নেটওয়ার্ক এবং অস্ত্র ও বোমা তৈরির কার্যক্রম উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করা হয়।
১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা বা ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের সময় হামাসে যোগদানের পর তিনি মোহাম্মদ দেইফ নামে পরিচিত হন। আরবীতে দেইফ অর্থ ‘দর্শক’ বা ‘অতিথি’।
তিনি গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যেখানে তিনি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিদ্যা অধ্যয়ন করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদন কমিটির প্রধান ছিলেন এবং প্রায়ই মঞ্চে অভিনয় করতেন।
১৯৮৯ সালে প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার উত্তেজনার সময় তাকে ইসরায়েল গ্রেপ্তার করে এবং ১৬ মাস আটকে রাখার পর মুক্তি দেয়। ২০০২ সালে ইসরায়েল কাসেম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতা নেতা সালাহ শেহাদেহকে হত্যা করার পর সামরিক গোষ্ঠীটির প্রধান হন দেইফ। এরপর থেকেই তাকে হত্যার জন্য বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা চালায় ইসরায়েল।
রিপোর্ট অনুসারে, ইসরায়েলের একটি হত্যা প্রচেষ্টায় দেইফ একটি চোখ হারিয়েছিলেন এবং একটি পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন।
এছাড়া ২০১৪ সালের আগস্টে গাজার একটি বাড়িকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দেইফের স্ত্রী এবং সাত মাস বয়সি ছেলে নিহত হয়।
এদিকে গত মে মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে) গত ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য দেইফসহ হামাসের তিন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।