অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দ দেয়া হয় তা ব্যয় নয়, আমার কাছে মনে হয় বিনিয়োগ। কারণ এই অর্থ ব্যয়ে আমরা আমাদের প্রজন্মকে গড়ে তুলছি।
আজ রবিবার সকালে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৭’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা যে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিচ্ছি, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ হয়তো এ নজির দেখাতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ বছর বিনামূল্যে ৩৬ কোটি ৩১ লাখ ২৪৫টি বই বিতরণ করেছি। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এসব বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে গত আট বছরে ২২৫ কোটি ৪৩ লাখ ১ হাজার ১২৮ খানা বই বিতরণ করা হয়েছে। এ বছর উপজাতিদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় ৮টি বই দেয়া হয়েছে।
নিরক্ষরতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। আমরা দুই বছরের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশে উন্নীত করি। এ সাফল্যে ইউনেস্কো বাংলাদেশকে পুরস্কার দেয়। পুরস্কারের অর্থ দিয়ে শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হয়। তবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের পর ২০০৯ সালে এসে দেখলাম সাক্ষরতার হার ৪৪ শতাংশে নেমে গেছে। তারপর আমরা চেষ্টা চালিয়ে সাক্ষরতার হার বর্তমানে ৭১ শতাংশে উন্নীত করেছি। শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা এ অর্থবছরে বড় বাজেট ঘোষণা করেছি। বাজেটে যে টাকা শিক্ষায় দেই সেটিকে আমরা ব্যয় হিসেবে দেখি না, বরং বিনিয়োগ হিসেবে দেখি। আমরা যুগোপযোগী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছি।
১৫০০টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রায় ৪০ বছর পর ২০০৯ এ আমরা ক্ষমতায় এসে ২৬ হাজার ৯৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছি। অনেক নতুন শিক্ষকের চাকরি এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্ব ডিজিটাল বিশ্ব। তাই আমাদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করতে হবে। ইতিমধ্যে ৩১ হাজার ১৩১টি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশে এখন এমন অনেক লোক আছেন যারা টাকা কোথায় খরচ করবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। তারা তাদের নিজ নিজ এলাকার স্কুলে একটি ল্যাপটপ ও একটি প্রজেক্টর অনুদান দিতে পারেন। আমরা সরকারি অর্থায়নে তা করছি। ২০১৭ সালের মধ্যে আরো ৫০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। তবে বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে আরো ভালো হবে।
তিনি বলেন, আমরা যার যার ধর্ম তারা পালন করব। তবে সব ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাস ফাইভের সার্টিফিকেট হাতে পেলে খুদে শিক্ষার্থীরা খুশি হয়। তারা সার্টিফিকেট নিয়ে ছবি তোলে। এতে তাদের কনফিডেন্স বাড়ে। আগে শিক্ষাজীবনে প্রথম সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করতে হতো শিক্ষার্থীদের। কিন্তু ক্লাস ফাইভে ও এইটে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের সেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।