অগ্রসর রিপোর্ট: রাঙামাটির লংগদুতে প্রসীত বিকাশ নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সদস্যসহ দুইজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) গ্রুপকে দায়ী করেছে ইউপিডিএফ। তবে জেএসএস বলছে, ইউপিডিফের নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এই ঘটনা ঘটেছে।
লংগদু উপজেলার লংগদু ইউনিয়নের মনপতি বাজার এলাকায় শনিবার সকালে এই সশস্ত্র হামলা হয়।
নিহতরা হলেন- ইউপিডিএফ সদস্য তিনক চাকমা (৫০) ও দুদকছড়া গ্রামের জুরেন্দ্র চাকমার ছেলে ধন্যমতি চাকমা (৪০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাট্টলী এলাকায় ১০-১২ জনের একটি দল মনপতি ও মধ্যখাড়িকাটা এলাকায় এসে ইউপিডিএফের সদস্যের ওপর হামলা চালালে ঘটনাস্থলেই দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটির সহকারী পুলিশ সুপার (বাঘাইছড়ি-লংগদু) সার্কেল আবদুল আউয়াল। তিনি বলেন, এলাকাটি অনেক দুর্গম হওয়ায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সময় লাগবে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে সশস্ত্র হামলায় দুজনের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একে কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে ইউপিডিএফ।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলেন, ইউপিডিএফের নেতৃত্বে সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্রসহ বান্দরবানে বম জাতিসত্ত্বার ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সরকারের কৃপা লাভের আশায় সন্তু লারমা আবারও তার খুনি বাহিনীকে দিয়ে ইউপিডিএফের কর্মী-সমর্থকদের হত্যা করতে শুরু করেছেন। তার নির্দেশে আজকে লংগদুতে ইউপিডিএফের এক কর্মী ও এক সমর্থককে হত্যা করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে সন্তু লারমা একজন খুনি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। তারা সন্তু লারমাকে গ্রেপ্তারপূর্বক আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণ করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন।
তবে ইউপিডিফের বক্তব্যকে দায় চাপানোর অপচেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস। দলের লংগদু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা এ ব্যাপারে বলেন, তাদের অভ্যন্তরীণ কন্দোলের কারণে হয়ে থাকতে পারে। তাদের নিজেদের অপকর্মের দায় আমাদের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করছে। ওই এলাকায় জেএসএসের কোনো কার্যক্রম নেই।
পার্বত্যাঞ্চলে সশস্ত্র সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও কোন্দল-সংঘাত বন্ধ হয়নি। ফলে শান্তি আসেনি পাহাড়ে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২ পর্যন্ত আভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিশেষ বাহিনী ও স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত ও পারিবারিক কলহে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপহরণ হয়েছেন বেশ কয়েকজন।