অগ্রসর রিপোর্টঃ ম্যারাথনঢাকার রাস্তায় দ্বিধাহীন এবং বাধাহীনভাবে দৌড়ানোর স্বপ্ন অনেক দিন থেকেই মনের ভেতর লালন করছিলেন সামিয়া শারমিন।
পেশায় তিনি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। নিজে অ্যাথলেট না হলেও অলিম্পিকসের ভক্ত তিনি।
ঢাকার রাস্তায় ক্রীড়াবিদের বেশে সামিয়া শারমিনের দৌড়ানোর সুযোগ করে দিল ‘ঢাকা উইমেন্স ম্যারাথন’। নারীদের জন্য এই প্রথমবারের মতো ম্যারাথনের আয়োজন।
বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩০০ জন নারী এই ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। এদের কেউ ছাত্রী, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা ফ্যাশন ডিজাইনার।
১০ কিলোমিটার এই ম্যারাথনের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল একঘণ্টা ২৫ মিনিটি।
অংশ নেয়া তিনশ জন নারীর মধ্যে ২০৩ জন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দশ কিলোমিটার দৌড়ে শেষ করেছেন। এদের মধ্যে কেউ-কেউ মাঝ রাস্তায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
এভারেস্ট একাডেমি নামের একটি বেসরকারী সংস্থা এই ম্যারাথনের আয়োজন করে। তাদের সাথে সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফরিন জোহা সংকল্প করেছিলেন যে তিনি ১০ কিলোমিটার অবশ্যই দৌড়বেন। সময় যাই লাগুক না কেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে তিনি লক্ষ্যে পৌছাতে পেরেছেন।
আফিরন জোহা বলছিলেন, “ আমার প্রতিজ্ঞা ছিল যে আমি হাল ছাড়ব না। যদি অসুস্থ না হই, আমি কমপ্লিট (শেষ) করবই।”
সকাল সোয়া নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে শুরু হয় এই ম্যারাথন।
ম্যারাথনের রুট ছিল – টিএসসি- শাহবাগ-কাটাবন-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-নীলক্ষেত-পলাশী- শহীদ মিনার- দোয়েল চত্তর – মৎস্য ভবন – শাহবাগ – টিএসসি।
প্রতিযোগীরা যখন যে রাস্তায় অতিক্রম করেছেন, তখন সেখানে পুলিশ যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল।
এই ম্যারাথনে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কারও দেয়া হয়েছে। ৪৮ মিনিটি ২২ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুমী আক্তার। সুমীর জন্য ১০ কিলোমিটার দৌড়ানো তেমন কোন চ্যালেঞ্জিং কাজ নয়।
কারণ তিনি সেনাবাহিনীতে নিয়মিত শারীরিক প্রশিক্ষণের মধ্যেই থাকে।
পুরষ্কার গ্রহণের পর সুমী আক্তার বলছিলেন, “ আমি সেনাবাহিনীতে নিয়মিত অনুশীলন করি। সেজন্য আমি চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি।”
তবে এই প্রতিযোগিতায় যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের জন্য পুরষ্কার পাওয়ার বিষয়টি মোটেই গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা। এই ম্যারাথনকে তারা দেখছেন খেলাধুলায় নারীদের প্রেরণা হিসেবে।
ইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শারমিন সুলতানা বলছেন এই প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নিয়েছেন খেলাধুলায় মেয়েদের সমর্থন জোগানোর জন্য।
তিনি বলেন , “ এক পর্যায়ে মনে হলো আর পারছিনা। কিন্তু আমি ভাবলাম, শেষ করতেই হবে। পুরষ্কার পাই, আর না পাই।”
ফ্যাশন ডিজাইনার নুসরাত জানালেন তিনি নিজে কখনো খেলাধুলা করেন না। এমনকি সকালে কিংবা হাটতেও বের হন না। তারপরেও ১০ কিলোমিটার দৌড়াতে এসেছিলেন তিনি।
নুসরাত বলেন, “ দেখুন আজ অনেক গরম। তারপরেও কিন্তু আমি হাল ছেড়ে দিচ্ছিনা। আমরা দেখাতে চাই মেয়েরাও এটা করতে পারে। আমাদের সে শারীরিক সামর্থ্য আছে।”
এই প্রতিযোগিতায় যিনি প্রথম হয়েছেন তাকে ৩০হাজার টাকা পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে ২৫ হাজার এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ২০ হাজার টাকা পুরষ্কার দেয়া হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন আবারো এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে প্রতিযোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে।