অগ্রসর রিপোর্ট: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জিয়াদ রাদ আল হুসেইন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকে পাঠ্যপুস্তকে জাতিগত নির্মূলের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের অবাধে কাজ করতে দিতে দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে জোর আহ্বান জানান।
হাইকমিশনার আজ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৬তম অধিবেশনে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।
তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতাদের সমর্থন ও শরণার্থীদের সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
আল হুসেইন রোহিঙ্গা সমস্যায় জাতিসংঘের সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরো বড় ধরনের আরেকটি নৃশংস নিরাপত্তা অভিযান চলছে।
ইউএনএইচসিআর-এর হিসেবে ৩ সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে মিয়ানমার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। যা পূর্ববর্তী অভিযানে পালিয়ে আসা ৮৭ হাজার উদ্বাস্তুর ৩ গুণেরও বেশি। অনেক মানুষ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আটকা পড়েছে বলে জানান হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, এটা হচ্ছে ২৫ আগস্ট কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে জঙ্গি হামলার সরাসরি প্রতিক্রিয়া। কিন্তু এ ধরনের প্রতিক্রিয়া সুস্পষ্টভাবে অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
আল হুসেইন রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর রোহিঙ্গা গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়া ও বিচারবহির্ভূত নির্বিচার হত্যাকান্ড সংঘটনের প্রমাণ হিসেবে তিনি বিভিন্ন প্রতিবেদন ও স্যাটেলাইট চিত্রের উল্লেখ করেন।
আল হোসেন বলেন, আরো ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছেÑ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সীমান্তের পাশে এখন স্থল মাইন পুঁতে রাখছে এবং এক সরকারি বিবৃতি থেকে জানা গেছে, সন্ত্রাসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা এ দেশের নাগরিক, কেবল এ কথা প্রমাণ করতে পারলেই তাদের দেশে ফিরতে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, অং সান সুকির নিজস্ব নিযুক্ত রাখাইন উপদেষ্টা কমিশন স্বীকার করেছে, ১৯৬২ সাল থেকে বিভিন্ন সরকার ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব ও রাজনৈতিক অধিকার হরণসহ যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে সেসব ব্যবস্থা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। তাদের ফিরে আসার আর কোন সুযোগ নেই।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার গত বছরেই কঠোর হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছিল, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে মনে হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ আরো বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি যাতে পুরোপুরি প্রকাশ না পায়, এ জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইন রাজ্যে কোন মানবাধিকার কর্মীকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তবে এ পরিস্থিতি ভবিষ্যতের পাঠ্য বইয়ের জন্য একটি জাতি নিধনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আল হোসেন বলেন, মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং তাদেরকে তাদের নিজস্ব গ্রামে থাকতে দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করা হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সে দেশের সরকারের ভাবমূর্তিই নষ্ট হবে।
তিনি সেনা বাহিনীর এ ধরনের নির্দয় আচরণ বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, যা কিছু ঘটছে, এর জন্য একসময় জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বিনা বাধায় তাকে ও তার লোকদের মিয়ানমারে প্রবেশের অনুমতি দিতে সে দেশের সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।