নাচোল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা : চাঁপাইনবাবগঞ্জেরনাচোলের আনোকাদীঘি গ্রামে দীঘির মাছ মারাকে কেন্দ্র করে লঙ্কা কান্ড ঘটেছে। নাচোল থানার পুলিশ একে কেন্দ্র করে কসবা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক টমাসকে বেধড়ক পিটিয়ে তাকেসহ তিনজনকে আটক করেছে। গ্রামবাসীর অনেকেই জানিয়েছেন, অতীতে পুলিশের এরকম আগ্রাসী মনোভাব তারা কখনো দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না।
এদিকে আটক তিনজনকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় গেলে নাচোল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কাদেরের সঙ্গে পুলিশের চরম বাক-বিতন্ডা হয়েছে। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে পুলিশ দুর্ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, নাচোল-রহনপুর সড়কের পাশের একটি গ্রাম আনোকাদীঘি। এই গ্রামে ৭.৭৭ একর পরিমাণের একটি দীঘি রয়েছে, যা আনোকাদীঘি নামে পরিচিত। দিঘিটি বাংলা ১৪২১-২৩ বঙ্গাব্দ মোট তিন বছরের জন্য ইজারা পান নাচোলের যাদুপুর গ্রামের সাইদুর রহমান।
গত ১১ এপ্রিল নাচোল জলমহাল কমিটির সভায় ওই দীঘিটি ‘চন্দনা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড’কে প্রতি বছর ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ইজারা মূল্যে তিন বছর মেয়াদে প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগের ইজারাদার সাইদুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে।
দীঘিটির ইজারা নির্ধারিত না হওয়ায় গ্রামবাসী স্বউদ্যোগে মাছ ছাড়েন এবং পরবর্তীতে গ্রামের মসজিদের উন্নতিকল্পে আগের ইজারাদার সাইদুর রহমানকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে মৌখিকভাবে দীঘিটি ভোগদখলের জন্য প্রদান করেছেন বলে গ্রামবাসী জানায়। এজন্য অগ্রিম ৮০ হাজার টাকাও নিয়েছেন গ্রামবাসী। তবে গ্রামবাসীর কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ছিলেন। গ্রামবাসী জানিয়েছে, প্রায় দিনই দীঘিটিতে মাছ মারা হতো। তবে ঘটনার দিন কী পরিমাণ মাছ মারা হয়েছে তা কেউই বলতে পারেননি।
সরেজমিন জানা যায়, রোববারও গ্রামের তরিকুল, লস্কর, আপেল, সনিসহ বেশ কয়েকজন দুপুরে মাছ মারার চেষ্টা করেন। এ খবর আগের ইজারাদার নাচোল থানার ওসিকে মৌখিকভাবে মোবাইল ফোনে জানালে ওসি প্রথমে এসআই আহসান হাবিব ও এএসআই জহরুলকে ঘটনাস্থলে পাঠান।
ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে সদস্যদের বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। এ সময় কসবা ইউপির ২নং ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক টমাস পুলিশের কাছে কারণ জানতে চাইলে তাকেও বেধড়ক পেটানো হয়। এ সময় জনতা উত্তেজিত হলে নাচোল থানা পুলিশ অতিরিক্ত ফোর্স পাঠায়।
খবর শুনে কসবা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত এবং সমাধানের চেষ্টা চালালে পুলিশ তার ওপরও চড়াও হয় বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। পরে পুলিশ টমাসসহ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আটক তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কাদেরের অনুসারী বলে জানা গেছে। গ্রামবাসীর অনেকেই স্বীকার করেছেন, যারা মাছ মেরেছে পুলিশ তাদেরকে আটক না করে যারা জড়িত ছিল না তাদেরকেই ধরে নিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আবদুল কাদের থানায় কর্মীদের ছাড়াতে গেলে এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। আবদুল কাদের পুলিশকে বলেন, ‘যারা মাছ মারেনি তাদেরকেই আপনারা ধরে নিয়ে এসেছেন, এটা ঠিক নয়।’ প্রায় ঘণ্টাখানেক বাক-বিতন্ডার পর আবদুল কাদের থানা থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, থানায় দুই পক্ষেরই আচরণ ছিল উগ্র।
এ বিষয়ে আগের ইজারাদার সাইদুর রহমান বলেন, ‘পুকুর নিয়ে আজ (গতকাল) লিখিতভাবে থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। শুধু মৌখিকভাবে ওসিকে জানিয়েছিন।’ তবে সপ্তাহ খানেক আগে এ বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ ফাছিরুদ্দিন জানান, মাছ মারার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল এবং তিনজনকে জালসহ আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাচোল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, ‘পুলিশ লিখিত অভিযোগ না পেয়ে কিংবা কোনো ঘটনা না ঘটার পরও সাধারণ মানুষের ওপর যে হামলা করেছে তা দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।’ সঠিক তদন্তের জন্য তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।