ভোলা প্রতিনিধি : ভোলার মনপুরা উপকূলে পূর্ণীমা ও অক্ষীর প্রভাবে মেঘনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে ১০ গ্রাম।
এতে গত তিন দিন (শনি-সোমবার) একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হয়ে রমযানে দুর্ভোগ পড়েছে উপজেলার দুই ইউনিয়নের পানিবন্দি অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এছাড়াও প্রায় সহ্রারাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ মানুষের রান্না ঘরের চুলায় হাড়ি না উঠায় না খেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনযাপন করতে হচ্ছে।
অপরদিকে, মনপুরা থেকে বিচ্ছিন্ন কলাতলীর চর ও চরনিজামে ৪-৫ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বাসিন্দারা।
এদিকে সোমবার ভোর রাত ৩টায় জোয়ারের চাপে হাজিরহাট ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের চরযতীন গ্রামের তিনটি পরিবার মিনা বেগম, শাহনাজ ও সাজু বেগমের ঘর ভেঙ্গে যায়। পরে উপজেলা পরিষদের ভবনের নিচে পরিবার তিনটি আশ্রয় নেয়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রয়ন প্রকল্পের ৩টি ঘর তাক্ষনিক বরাদ্ধ করে।
ঘর ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারের সদস্য মিনা বেগম, শাহনাজ ও সাজু বেগমে জানান, সোমবার ভোর রাতে জোয়ারের পানির চাপে ঘর ভেঙ্গে যায়। পরে সাতরিয়ে মূল সড়কে উঠে যাই। এরপর উপজেলা পরিষদের ভবনে আশ্রয় নিই। গত তিনদিন রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে কোনমতে জীবন যাপন করছি।
পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দরা তাদের দুভোর্গের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করে বলেন, গত দুই বছর ধরে বেড়ীবাঁধ ভাঙ্গা কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড শীত মৌসুমে ব্যবস্থা নেয়নি। বর্ষা মৌসুমে বেড়ীবাঁধের কাজ শুরু করেছে। এখন অস্বাভাবিক জোয়ার তারা কাজ করতে পারছেনা। এদিকে আমাদের বাড়ি-ঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছি।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডে ডিভিশন-২ এর উপসহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এতদিন বরাদ্ধ ছিলনা বলে কাজ করতে পারি নাই। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেকুয়া মেশিনের মাধ্যমে বেড়ীবাঁধ সম্পন্ন করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের কুলাগাজী তালুক, ঈশ্বরগঞ্জ, কাউয়ারটেক, আন্দিরপাড় ও চর কলাতলী গ্রাম ও হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট, সোনারচর, চরযতিন, চরজ্ঞান গ্রাম ও উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের চর নিজাম জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এই সমস্ত গ্রামের প্রত্যেক বাড়ির ঘরে পানি প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এছাড়াও সোনারচর ও চৌধুরী বাজারের ডিসি রোডের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের পানি থেকে বাঁচতে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে সড়কে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান দিপক চৌধুরী জানান, ইউনিয়নের বেশিভাগ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী জানান, উপজেলার মনপুরা ও হাজিরহাট ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দ্রুত ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ নির্মানের জন্য পাউবোর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সোহাগ হাওলাদার জানান, জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য ৫ টন জিআর চাউল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।