সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : হাওরে পোনা মাছ অবমুক্ত না করেই ফাইল ওয়ার্কের মাধ্যমে মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের বিল নার্সারী প্রকল্পের বরাদ্দের ১০ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ৯ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ গত কয়েকদিন ধরেই ফুঁসে উঠেছেন।
জেলা মৎস ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জেলার অন্যান্য উপজেলার ন্যায় মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের বিল ার্সানী প্রকল্পের আওতায় তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওর ও জলমহালে পোনা মাছ অবমুও করণের জন্য চলতি বছর মে মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে রিকুয়েষ্ট ফর কোটশেনের (আরএসপি) মাধ্যমে বাণিজ্যিক মৎস হ্যাচারী থেকে বিভিন্ন প্রকার মাছের পোনাক্রয় করে মণিটরিং কমিটির সদস্য, পোনামাছ ক্রয় কমিটির সদস্য, মৎসজীবী কটিমির লোকজন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ জনসম্মুখে ওইসব পোনা মাছ হাওর ও জলমহালে অবমুও করনের নিয়ম বেধে দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে তাহিরপুর উপজেলা মৎস কর্মকর্তা সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের আখের গোছাতে গিয়ে ফাইল ওয়ার্ক ও ফটোসেশনের মাধ্যমে চলতি বছরের ২৯ মে থেকে ১১ জুন পর্য্যন্ত নাম ঠিকানা ও অস্থিত্ব বিহিন হাসান ও শাপলা মৎস হ্যাচারী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার ৩৩৫ কেজি পোনা মাছ ক্রয় দেখিয়ে ওইসব পোণা মাছ উপজেলার গোরমা, বনুয়া, চুনখলা, পালই প্রকাশ পালির বিল ও হাওরে অবমুও দেখিয়ে কাগজে কলমে পেনামাছ অবমুও করন সম্পন্ন দেখিয়েছেন।
ওইসব কাজে মৎস কর্মকর্তাকে সহযোগীতা করে মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দের টাকা সুকৗশলে ভাগ বাটোয়ারা করে নিতে প্রশাসনের ক’জন কর্তাব্যক্তি, ক’জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী দুয়েক জনকেও ব্যবহার করেছেন।
তাহিরপুর উপজেলা মৎস্যজীবি কমিটির সদস্য সজল বর্মন অভিযোগ করে বলেন, আমার জানা মতে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার পোনা মাছ অবমুও করেছেন, বাকি সাড়ে ৯ লাখ টাকার পোনা মাছ কবে কোথায় কাদেরকে নিয়ে অবমুক্ত করেছেন তা কেবল মৎস কর্মকর্তা আর উনার সাথে থাকা লোকজন জানেন।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সু’কৌশলে তার নিজস্ব লোক দিয়ে লোক দেখানো পোনা অবমুক্ত করে বরাদ্দের সাড়ে ৯ লাখ টাকা আত্মসাতের জন্য সব রকমের কাজ গুটিয়ে এনেছেন।
এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, যেখানে চলতি বছর হাওরের ফসল ডুবির কারনে গোটা জেলা জুড়ে হাহাকার বইছে। হাওরের কোটি কোটি টাকার মাছ মারা গেছে, সেখানে কবে কাদেরকে নিয়ে? কোন মৎস হ্যাচারী থেকে ১০ লাখ টাকার পোনা মাছ ক্রয় করে, কোন কোন বিল আর হাওরে সেই সব কাগুজে পোনামাছ অবমুক্ত করা হয়েছে তা উপজেলার অধিকাংশ লোকজনই তো জানেন না।
তাহিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, সরকারি বিধিবিধান মেনেই ১০ লাখ টাকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে দেড় কেজি পোনা মাছসহ ৩ হাজার ৩৩৫ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের জন্য উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে ফাইল জমা দেয়া হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করা হয়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে, হাসান ও শাপলা মৎস হ্যাচারী থেকে ১০ লাখ টাকার ওইসব পোনা মাছ ক্রয় করা হয়েছে বলে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ দাবি করলেও ওই দুটি মৎস হ্যাচারীর অবস্থান বা ঠিকানা কোথায়? জানতে চাইলে তা তিনি জানাতে পারেননি।