অগ্রসর ডেস্ক : বনানীর ধর্ষণকাণ্ডে রিমান্ডে থাকা হাসান মোহাম্মদ হালিম ওরফে নাঈম আশরাফসহ প্রধান অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী পুলিশের কাছে অভিযোগ স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, গত ২৮ মার্চ রাতে রেইনট্রি হোটেলে অভিযোগকারী দুই তরুণীর সঙ্গে আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদারের ছেলে সাফাত ও নাঈমের একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। যা আইনি ভাষায় ধর্ষণ বলেই বিবেচিত হচ্ছে। আদালতের জবানবন্দিতে সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিবও একই কথা জানিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রিমান্ডে থাকা তিন আসামিও ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেবে বলে পুলিশের কাছে জানিয়েছে। তাই এ ঘটনায় তদন্ত শেষ পর্যায়ে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত করা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বপশ্চিমকে এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তিনি জানান, সব আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় মামলার তদন্তকাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। জব্দকৃত রেইনট্রি হোটেলের সিসিটিভির সার্ভার ও তরুণীদের পোশাকসহ তদন্তের জন্য যেসব আলামত ও সাক্ষ্যপ্রমাণের দরকার, তার সবই মোটামুটি তাদের হাতে রয়েছে। ধর্ষণের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধানও পেয়েছেন তারা। আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও আদালতে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণে আরও যেসব আলামত ও পরীক্ষা প্রয়োজন, তাও দ্রুত সময়ে শেষ করতে চান তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
অপর এক তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার অর্থই হচ্ছে, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আসামিও তাদের হাতে। অন্য তিন আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ওরফে আজাদ ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের জবানবন্দি নেওয়ার পর আনুষঙ্গিক কিছু কাজ শেষে এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। রহমত আলী ও বিল্লাল ধর্ষণ ঘটনার আদ্যোপান্ত জানিয়েছে পুলিশকে। রিমান্ড শেষে তারাও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে বলে জানিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান জানান, মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। আসামিরাও ইতোমধ্যে জেনে-বুঝে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অন্য আসামিরাও আদালতের কাছে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তুলে ধরবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ফেরিওয়ালার ছেলে নাঈম আশরাফ রিমান্ডে রেইনট্রি হোটেলে ২৮ মার্চ রাতের ধর্ষণকাণ্ডের রোমহর্ষক কাহিনী ছাড়াও অকপটে নিজের প্রতারণার নানা চিত্র তুলে ধরেছে। এদিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে থাকা সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষীও ধর্ষণকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর বর্ণনা দিয়েছে। বিল্লাল ওই রাতের বর্ণনায় বলেছেন ধর্ষণকাণ্ডের মূল হোতা নাঈম আশরাফ। জন্মদিনের প্রস্তুতি নিতে বলে গত ২৮ মার্চ নাঈমই সাফাতকে বলেছিলেন, ‘আজ রাতে কোনো প্রফেশনালকে চাই না। সম্পূর্ণ নন-প্রফেশনালকে চাই। এমন কাউকে দাওয়াত করবি না, যারা এর আগে কোথাও কাজ করেছে।’ এরপর সাফাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রীকে সাদমানের মাধ্যমে ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের কথোপকথনের পুরোটা সময় গাড়িচালক বিল্লাল তাদের পাশেই ছিল।
বিল্লাল আরও জানিয়েছে, সাফাত ও নাঈম ওই ঘটনার আগেও অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে। নিত্যনতুন মেয়েদের প্রথমে কোনো রেস্টুরেন্টে ডেকে পরিচয় হতো তারা। এরপর অভিজাত হোটেলে নিয়ে তাদের সর্বনাশ করত। কারো কারো সঙ্গে ইচ্ছার বিরুদ্ধেও শারীরিক সম্পর্ক করা হতো। অনেকে আবার টাকার বিনিময়েও করতেন।