অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বন্টন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১২টি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটানা তৃতীয় বারের মতো সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটি হবে প্রথম দিল্লী সফর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে প্রকৃতপক্ষে কয়টি চুক্তি হতে পারে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবো না, তবে এ টুকু বলতে পারবো কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।
আগামী ৫ অক্টোবর দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এ চুক্তিগুলো স্বাক্ষর হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভারত অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চারদিনের সরকারি সফরে আগামীকাল নয়াদিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আগামী ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লীতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু এবং সীমান্ত হত্যা ইস্যুটি আলোচনায় স্থান পাবে।
তিনি বলেন, ‘হাসিনা-মোদির বৈঠকে তিস্তার সাথে সকল আন্ত:সীমান্ত নদী নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের সহায়তা এবং সীমান্ত হত্যা কমিয়ে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সকল দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।’
শেখ হাসিনা ৫ অক্টোবর দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রাম নাথ কোবিন্দ্রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
ভারতের ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আবাসিক প্রাসাদে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
দ্বিপাক্ষীক বৈঠক চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশ পানি বন্টন চুক্তি অনুসারে গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিয়ে এক যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা করবে।
তিনি বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর তিস্তাসহ আন্তঃসীমা নদীসমূহের পানি ভাগাভাগির বিষয়ে ‘চুক্তি কাঠামো’ স্বাক্ষরের ব্যপারেও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈঠক চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের পুরোপুরি সমর্থন প্রত্যাশা করবে।’
মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিলম্ব এতদ্ঞ্চলের স্থিতাবস্থা বিঘিœত হওয়া নিয়েও আমরা আমাদের উদ্বেগের বিষয়ে ভারতকে পুনরাবৃত্তি করবো।’
তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনা সেই সঙ্গে সীমান্তে চোরাকারবারি রোধের ব্যাপারে উভয় দেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমান্তরক্ষীদের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের ব্যপারেও ঢাকা দিল্লি বৈঠকে আলোচিত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সীমান্তে আর একটি হত্যাও দেখতে চাই না। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় সরকারের, ‘সীমান্তে আর একটিও হত্যা না হওয়ার’ সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ২০০৩ ও ২০০৬ সালের তুলনায় সীমান্ত হত্যাকা- নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে।’ দুই দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের নদী সংযোগ ও সমুদ্র পথ নিয়ে আলোচনা করবে।’ এর ওপর ভিত্তি করে ভারতীয় পণ্য আমদানী রপ্তানীর ক্ষেত্রে চিটাগাং ও মোংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর (এসওপি) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মোমেন উল্লেখ করেন।
এছাড়াও, যৌথভাবে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়েও বৈঠকে আলোচিত হবে।
মোমেন বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর আবাসস্থলে সাক্ষাৎ করবেন।
কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি-২০৩০) ৩ অক্টোবর সকাল ৮টার দিকে নয়াদিল্লীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবে এবং স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় নয়াদিল্লী পৌঁছবে।
এদিন শেখ হাসিনা হোটেল তাজ প্যালেসের দরবার হলে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনোমিক সামিটে বাংলাদেশ বিষয়ক কান্ট্রি স্ট্রাটেজি ডায়ালগে যোগদান করবেন।
একই দিনে তিনি তাঁর সম্মানে মৈত্রী হলে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত একটি সংবর্ধনা এবং বাংলাদেশ হাউজ আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন।
ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এ নৈশভোজের আয়োজন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ৪ অক্টোবর ভারতের তিনটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড এক্সচেঞ্জের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক ও মতবিনিময় করবেন। সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী হেং সুয়ি কিট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
একই দিনে শেখ হাসিনা হায়দ্রাবাদ হাউজে আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় যোগ দেবেন এবং পরিদর্শক বইতে স্বাক্ষর করবেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারতের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
শেখ হাসিনা ৬ অক্টোবর দেশে ফিরবেন।